আবেদনের নামে প্রহসন ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’, আদালতে যাবে না বিএনপি
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে এবারও সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় বেশ হতাশ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, আশা ছিল সরকার এবার তার বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নেবে। কিন্তু সরকার বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়েছে। তারা ‘আবেদন নাটক’ সাজিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ধরনের ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে বর্তমান মুক্ত অবস্থা থেকে আবার জেলে যেতে হবে। তারপর আদালতে গিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আদালত অনুমোদন দিলে দেশের বাইরে যেতে পারবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের মনোভাব বলে দিচ্ছে আদালতে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। উল্টো অন্যকিছু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে আদালতে কোনো আবেদন করা হবে না।
তাছাড়া এর আগেও আদালত থেকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বহুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এবারও যে এমনটি হবে না তার নিশ্চয়তা কী? তাই দেশের হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে যতটুকু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, সেটাই চালিয়ে যাবে বিএনপি। একই সঙ্গে মাঠের রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি খালেদার অসুস্থতা নিয়ে দেশে-বিদেশে আরও জনমত গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। সরকার প্রথম থেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রেখেছে। তারা চায় খালেদা যেন এভাবেই বাকী জীবন অসুস্থ থাকেন আর এভাবেই তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তারা আসলে খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। বিদেশে নিতে না দেওয়া এবং আবেদন করতে বলে নাটক করা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। কিন্তু এসব করে তাদের শেষ রক্ষা হবে না।’
আরও পড়ুন
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আরও পড়ুন
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া নিয়ে আইনমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা আইনের ব্যাখ্যা নয়, অপব্যাখ্যা। প্রকৃত ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনমন্ত্রী পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়ে বলেছিলেন– যদি খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, তাহলে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু তারা বিষয়টিকে আইনি বিবেচনায় না নিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়েছেন। এখানে প্রতিহিংসা কাজ করেছে।’
আদালতে যাওয়া প্রসঙ্গে কায়সার কামাল বলেন, ‘এর আগেও আদালতে ম্যাডামের জামিন আবেদন বহুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’
নতুন শর্ত দিতে চায় সরকার?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিনিময়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে একটা দেন-দরবার করতে চায়। কিন্তু খালেদা জিয়া কোনো শর্তে বিদেশে যেতে চান না।’
অসুস্থ খালেদার কষ্ট মেনে নিতে পারছে না পরিবার
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদনটি তার পরিবার কোনো আশা কিংবা ফাঁদে পড়ে করেনি। তারা বাস্তবতার নিরিখে সরকারের কাছে আবেদনটি করেছিলে। কারণ অসুস্থ খালেদা জিয়ার কষ্ট পরিবারের সদস্যরা সহ্য করতে পারছেন না। গত দেড় মাসে তাকে তৃতীয়বারের মতো সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। ফলে পরিবারের সদস্যরা তার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ জন্য একাধিকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তারা।
খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয় : চিকিৎসক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসের জটিলতা এখনও সুবিধাজনক অবস্থায় আসেনি। হঠাৎ করে সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। আর সেটার কারণে অন্যান্য রোগগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ জন্য ঘন-ঘন তাকে সিসিইউতে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডাম অসুস্থ, ওনার অবস্থা ভালো নয়। মেডিকেল বোর্ড তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’
এএইচআর/এসকেডি