চট্টগ্রামে চলছে ছাত্রলীগ নেতা ছাঁটাই, বাদ যায়নি শিক্ষকও
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বহিষ্কার করছে ছাত্রলীগ। এ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মোট ৯ নেতাকে বহিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও একই অভিযোগে আবু ছালেহ মো. যোবায়ের নামে চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার এক অস্থায়ী শিক্ষককেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (১৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক মো. সাজেদুল হক সাজ্জাদ ও সহ-সম্পাদক শাহাজাহান হাবিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
একই দিন লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গাজী আমজাদ ও মো. তাউসিফ এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ. কে. এম আসিফুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিয়াদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এছাড়া বুধবার সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সামিউদ্দৌলা সীমান্তের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আফসার ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেককে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে, সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবু ছালেহ মো. যোবায়কে। তিনি মাদ্রাসাটির ইবতেদায়ি শিক্ষক (গণিত) পদে অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল (বুধবার) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আজাহারী সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়, আপনি ইবতেদায়ি শিক্ষক (গণিত) হিসেবে গত ১২ মার্চ হতে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসায় অস্থায়ীভাবে কর্মরত। অত্র মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আপনি নিয়োগপত্রের ৪ ও ৬ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করেছেন এবং আপনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় আপনাকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাওলানা সাঈদীর মৃত্যু হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
এমআর/এমএ