চলতি সপ্তাহে বিএনপিসহ বিরোধীদের ‘এক দফা’ ঘোষণা
সরকারের পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। এবার আন্দোলনের ধরন পাল্টাতে চায় তারা। এরই অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে ‘এক দফা’র ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে ঘোষণাটি কীভাবে আসবে সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছেন না বিএনপিসহ অন্য দলের নেতারা।
বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের আন্দোলনে ঢাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তাদের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব ঢাকা কেন্দ্রীক জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর। এছাড়া এক দফার যে ঘোষণা তা বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোর পক্ষ থেকে একটি মঞ্চ থেকে আসতে পারে। একই বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে পৃথক ঘোষণা আসতে পারে। এক দফার ঘোষণা পৃথক মঞ্চ থেকে আসলেও দিন একই থাকবে।
এক দফার পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা এবং গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দাবি ঘোষণা করা হবে। আর এর পরপরই রাজধানীকেন্দ্রিক জনগণকে সম্পর্কিত করে ‘সর্বাত্মক’ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী দলগুলোর।
বিরোধী দলগুলোর নেতারা বলছেন, আগামী ১২ জুলাই এক দফার যৌথ ঘোষণার প্রাথমিক দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওইদিন রাজধানীতে বড় কোনো সমাবেশে বা সংবাদ সম্মেলন করে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে এক দফার ঘোষণা দেওয়া হবে। আর ওইদিন কিছু কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। কর্মসূচির ধরন নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। তবে, কর্মসূচি যাই হোক না কেন, ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়ে তা প্রণয়ন করা হবে। কারণ ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা সম্ভব হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সহসাই যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক দফার ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) একদফার ঘোষণা, কর্মসূচি ও নানান বিষয় নিয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি। বৈঠকের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক দফার যৌথ ঘোষণা এই সপ্তাহে করা হবে বলে আশা করছি। এটা তিনভাবে হতে পারে, যেমন— যার-যার অবস্থান ঘোষণা করা, সেটা সমাবেশ করে দেওয়া অথবা সংবাদ সম্মেলন করে দেওয়া।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ১২ জুলাই যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি কিংবা রূপরেখা বা ইশতেহার যাই বলুন না কেন, এটিই ঘোষণা হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত সেই তারিখকে সামনে রেখে আমরা এগোচ্ছি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনে বিএনপির সঙ্গে থাকা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ যেসব জোট আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেখানে যে মতামত আসবে সে অনুযায়ী এক দফার ঘোষণা আসবে। তবে, যেহেতু হাতে সময় কম তাই সমাবেশের চাইতে বড় করে সংবাদ সম্মেলন করে এক দফার ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আরও কয়েকটি জোটের সঙ্গে বৈঠক করা বাকি আছে। তাদের সঙ্গে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে বৈঠক করা হবে। তাদের কাছ থেকে যে পরামর্শ আসবে সে অনুযায়ী এক দফার ঘোষণা দেওয়া হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক আছে। এরপর এক দফার ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের তো ১৯-২২ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী রোড মার্চ আছে। এরপর পর্যায়ক্রমে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ধরন নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঢাকামুখী রোড মার্চ, ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি, সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন ঘেরাও। এছাড়া কেউ-কেউ হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের চিন্তা হচ্ছে ধীরে-ধীরে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করে কঠোরতার দিকে যাওয়া। লক্ষ্য একটাই, সর্বাত্মক আন্দোলন ঢাকাকেন্দ্রিক করা। যেন সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায়।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা সারাদেশে সমাবেশ করেছি, পদযাত্রা করেছি, তারুণ্যের সমাবেশ করেছি। একটা ঘর তৈরির আগে যেমন বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে হয়, সেরকম এতদিন আমরাও চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা এখন চূড়ান্ত আন্দোলনে যাব। সেই আন্দোলন যুগপৎভাবেই হবে।
কর্মসূচির ধরনের কেমন পরিবর্তন আসতে পারে, জানতে চাইলে টুকু বলেন, এই মুহূর্তে সেটা বলতে চাচ্ছি না।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কর্মসূচি তো চলমান আছে। সেটিকে আরও বেগবান করা হবে। সামনে নতুন-নতুন কর্মসূচি আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যতটুকু স্পেস নিয়ে করা যায়, সেই রকম করা হবে। বহুমুখী কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না তার চিন্তা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে।
এএইচআর/কেএ