পল্টন ছাড়লেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা
দুপুরে জোহরের নামাজের পর স্লোগান দিয়ে রাজধানীর পল্টন মোড়ে অবস্থান নেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এর আগে রোববার (২৮ মার্চ) সকালেও তারা এখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাঠি হাতে হরতাল সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হেফাজতের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত থাকলেও বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়নি তারা। পরে বিক্ষোভকারীরা যুবলীগ, ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পল্টন মোড়ে ও আশপাশের এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।
বেলা ৩টার পর মিছিলটি আবারও বায়তুল মোকাররমের দিকে চলে গেলে পল্টন মোড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেয় পুলিশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ও বায়তুল মোকাররম, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হেফাজতের মিছিলে হামলা, সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে রোববার (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় সংগঠনটি। একই ঘটনায় শনিবার (২৭ মার্চ) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে হেফাজতে ইসলাম।
হরতালের সার্বিক চিত্র
>> হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে হেফাজতের কর্মীরা। এতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর এবং দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
>> হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এরপর থেকে হেফাজতের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা জেলা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় দুই সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
>> রাজধানীর পল্টনে হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পক্ষকেই ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টার পর থেকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে অবস্থান নিতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, একই সময়ে উত্তর পাশে অবস্থান নেন হেফাজতের সমর্থকরা। দুপক্ষ হরতালের সমর্থন ও বিরোধিতা করে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করেন। এতে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
>> হরতালের সমর্থনে নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। রোববার সকাল ৭টা থেকে মহাসড়কের জেলখানার মোড় এলাকায় অবস্থান নেন তারা।
>> ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় রোববার সকাল থেকে কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করে হরতাল পালন করছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা।
>> হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকা পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় হেফাজতের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
>> ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হলেও আন্দোলনকারীদের কঠোর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় চরপাড়ায়। রোববার সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এ এলাকায় জমা হন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ও বাঁশ ফেলে যানবাহন আটকে দেন।
>> আন্তঃনগর সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাময়িক ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকা পড়েছে।
>> হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বিভাগীয় শহর রংপুরে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থানে রয়েছেন। জেলার প্রবেশদ্বারসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে সড়ক, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল। রোববার (২৮ মার্চ) ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রংপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধে ও ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে হেফাজতের হরতাল।
রাজপথে আওয়ামী লীগও
হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে হরতালের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন।
হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মামুনুলের হুঁশিয়ারি
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, ‘আর যদি আমার কোনো ভাইকে হত্যা করা হয়, আবার যদি গুলি চলে, আর যদি কোনো ভাইয়ের রক্ত ঝরে, তাহলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গোটা বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আজ হেফাজতের হরতাল কর্মসূচি ছিল, আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে দেখা গেছে আওয়ামী পাণ্ডাদের। আমার শান্তিপ্রিয় ভাইদের ওপর পুলিশ-বিজিবি নির্বিচারে গুলি ছুড়েছে। মধুগড়ের বর্ষীয়ান আলেম হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটা কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করল। মনে রাখবেন, এভাবে গুলি করে হেফাজতকে দমানো যাবে না, বরং আপনি আপনার গদি টেকাতে পারবেন না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এটিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার হরতালের ডাক দেয় ইসলামী সংগঠনটি।
এসআর/এফআর