সংলাপ নিয়ে বক্তব্যের লক্ষ্য ‘দৃষ্টি সরানো’
নিরপেক্ষ সরকার ও বিদ্যুতের দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
‘নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয়নি’— বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর দেওয়া এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা একটা জিনিস ভালো পারে, সেটা হচ্ছে ডাইভার্সন। আমু সাহেব তো দলের মুখপাত্র নন। তার বক্তব্যের পরেই দলের মুখপাত্র (ওবায়দুল কাদের) বললেন— এটা তো আমাদের দলের বক্তব্য নয়। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন— সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। এদের একটাই উদ্দেশ্য... তা হলো মানুষের দৃষ্টি ডাইভার্ট করা। উদ্দেশ্য একটাই, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ও বিদ্যুতের দাবিকে ডাইভার্ট করা।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। এর পরেরটা পরে দেখা যাবে। দেশের মানুষ সেটা বুঝবে। আমরা লড়াইয়ে নেমেছি... জাতি নেমেছে। লড়াই করছি জাতির অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, বিএনপিকে ক্ষমতা আনার জন্য নয়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ যা চায়, আওয়ামী লীগ তার উল্টোটা করে। এরা দেশের মানুষের ভাষা বোঝে না। এরা সহিংস ও আক্রমণাত্মক। অন্যদের কথা বলার সুযোগ দেয় না, সেটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের শরীরী ভাষাও সন্ত্রাসীদের মতো। এরা মেরে-পিটিয়ে সব আদায় করবে। এখন সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা যারা বিএনপি করি তারা এতই ভদ্র, আমাদের এত সৌজন্যবোধ, গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের এত শ্রদ্ধা, আমাদের শরীরী ভাষা কখনও তাদের মতো হতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যে যেখানে আছি, একটু সাহস করে দাঁড়াই। আমাদের মধ্যে কেন জানি সাহসের অভাব দেখা দিয়েছে। শুধু আপনারা নন, আমরা নই, জাতির সাহসের অভাব দেখা দিয়েছে। সাহস সঞ্চার করে সবাইকে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার বলেছিল তাদের নাকি বিদ্যুৎ ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। এখন তো দিনে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ মিলছে না। আমরা যারা গ্রাহক সবাইতো বিল দিচ্ছি। তাহলে টাকা গেল কোথায়? তারা তো কয়লা আনতে পারে না। আসলে শুধু মিথ্যা কথা বলে। তাদের টাকা নেই, ডলারও নেই। মাঝে-মধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন। এটা করে কী হবে, জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লোডশেডিং নেই। তাহলে আমরা বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করে কেন সেটা করতে পারলাম না।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন বলেন, আজকে তত্ত্বাবধায়ক কিংবা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথাই বলুন... সবকিছুকে যদি অর্জন করতে হয়, সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে জোর গলায় চিৎকার করতে হবে, বলতে হবে। এদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, একদল আরেক দলকে বিশ্বাস করে না। তারা সবাই চায় নির্বাচনের সময় যেন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার থাকে। প্রমাণিত সত্য যে, অতীতে ৪টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। সেসব নির্বাচন সুষ্ঠু ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ যে নামেই ডাকুন না কেন, নির্বাচনের সময় একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার। যারা কোনও দলের হবে না। যারা দলবাজি করবে না।
দেশের সংকট অত্যন্ত গভীর উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, রাষ্ট্রকে যদি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে না পারি, একটা সরকার ব্যবস্থা নির্মাণ করতে না পারি, তাহলে এই জাতির বিকাশের পথ কোনও দিন বিকশিত হবে না।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। যৌথ পরিচালনা করেন মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম ও মো. মনোয়ারুল ইসলাম শিমুল।
এছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী।
এএইচআর/কেএ