দল নাকি বিনোদন জগৎ, কোথা থেকে প্রার্থী নেবে আওয়ামী লীগ
>> নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হয় আসনটি
>> উপ-নির্বাচনের প্রার্থীই দ্বাদশের প্রার্থী হতে পারেন
>> কয়েক মাসের জন্য এমপি হলেও সবাই চাইবে দলীয় প্রার্থিতা
>> আসনটি আবারও যেতে পারে বিনোদন জগতে
মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন খান পাঠানের (ফারুক) মৃত্যুতে ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে সংসদ সচিবালয়। উপ-নির্বাচনের জন্য যে কোনোদিন তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এ উপ-নির্বাচনের কয়েক মাস পরে আবার জাতীয় নির্বাচন। সেটিকে সামনে রেখে অনেকেই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে দলীয় নেতারা যেমন আছেন, তেমনি আছেন বিনোদন জগতের অনেকে। যদিও এখনই মুখ খুলছেন না কেউ।
আরও পড়ুন : তৃণমূলে ‘দুর্বৃত্তের হামলা’, ষড়যন্ত্র খুঁজছে আ. লীগ
ঢাকা-১৭ আসনটি গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস ও ভাষানটেকের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন চিত্রনায়ক আকবর হোসেন খান পাঠান (ফারুক)। সেই সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকার পরও চলচ্চিত্রের এক সময়ের দাপুটে নায়ক ফারুককেই বেছে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের এস এম আবুল কালাম আজাদ এবং ২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখানে এমপি হয়েছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থিতার বিষয়ে এখন ভাবছে না কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে দলটি।
তবে মনোনয়ন ফরম বিক্রির আগেই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন গুলশানের অভিভাবক? এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝেও আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রার্থীরা কেউ মুখ খুলছেন না। অনেকে আবার বিশেষ কৌশল অবলম্বন করছেন। নিজের প্রার্থিতার কথা নিজে না বললেও কর্মীদের দিয়ে ঠিকই প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের খান ও সহ-সভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন। আলোচনা রয়েছে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের নামও।
আরও পড়ুন : সিটি নির্বাচনেও ‘ঘুম হারাম’ আওয়ামী লীগের
অন্যদিকে ঢাকা-১৭ আসনে গত নির্বাচনে বিনোদন জগত থেকে প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে কারণে আসন্ন উপ-নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিনোদন জগত থেকে কাউকে মনোনীত করতে পারে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য, নায়ক ফারুক চলচ্চিত্রের লোক হলেও আওয়ামী লীগকে তিনি ভালোবাসতেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি পাশে ছিলেন। যেসব নেতা দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করেছে দলটি। ফারুকের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিনোদন জগতের কাউকে দিলেও সমস্যা হবে না। এ ক্ষেত্রে নায়ক ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে। এছাড়া অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানও এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যেই নিজের আগ্রহের কথা ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থিতার বিষয়ে এখন ভাবছে না কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে দলটি। মনোনয়ন ফরম বিক্রির আগেই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন রাজধানীর গুলশানের অভিভাবক? এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝেও আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রার্থীরা এখনই মুখ খুলছেন না
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা-১৭ আসনে আমি নির্বাচন করতে আগ্রহী। সময়টা ব্যাপার না। পরবর্তীতেও নির্বাচন রয়েছে। টার্গেট হচ্ছে পরবর্তী বিজয়।
তিনি বলেন, আমি ১৯৯৪ টাঙ্গাইল মধুপুর পৌর ছাত্রলীগের সদস্য হই। ১৯৯৮ সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এখন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছি। এই জোটের সভাপতি তারানা হালিম।
তিনি আরো বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি, প্রধানমন্ত্রীর সৈনিক হিসেবে আছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আছি, সেই জায়গা থেকে এ চিন্তা করছি।
আরও পড়ুন : মনোনয়ন বঞ্চিতরাও এখন মাঠে
এদিকে ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমানে হেভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে আব্দুল কাদের খান ও ওয়াকিল উদ্দিনের নাম। তবে দেশের একটি বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নামও শোনা যাচ্ছে।
দলীয় প্রার্থিতা বা নির্বাচন নিয়ে এখনই কথা বলতে চাচ্ছেন না ওয়াকিল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের আসনের সংসদ সদস্য মারা গেছেন মাত্র চারদিন হলো, এখনই এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
আরও পড়ুন : ফারুকের আসন শূন্য ঘোষণা, যেকোনো দিন তফসিল
আরেক প্রার্থী আব্দুল কাদের খানও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নেতারা জানান, আসন্ন উপ-নির্বাচনটি নামেই নির্বাচন হবে। সবাই দলের মনোনয়ন চাইবে, এখন হয়ত কথা বলছেন না, ঠিকই সঠিক সময়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। আর নির্বাচন তো হবে কয়েক মাসের জন্য, সে জন্য হয়ত প্রার্থীরা একটু চুপ। নির্বাচনে অংশ নিলে ব্যয় কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মতোই হবে। দলীয় টিকিট পেলেই প্রার্থীরা ব্যয় করবে। এই ব্যয় কিন্তু আগামী নির্বাচনের জন্য আগাম ইনভেস্ট। উপ-নির্বাচনে যে দলীয় প্রার্থী হবেন তারই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
উল্লেখ্য, চিত্রনায়ক ফারুক গত ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম।
এমএসআই/এসকেডি