গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নুরের
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। শনিবার রাতে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে থাকব না। তবে, চলমান যুগপৎ আন্দোলনে স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি পালন করব।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। দলটির দপ্তর সমন্বয়ক ও যুগ্ম-আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান এতে স্বাক্ষর করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সভাপতিত্ব করেন।
সভায় ভোটারবিহীন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে প্রহসনের নির্বাচন জনগণকে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে লক্ষ্যে শুধুমাত্র গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ না থেকে গণঅধিকার পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকল দলের সাথে রাজপথে সমন্বিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আগামী ১২ মে বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে সভায় একটি শোক প্রস্তাব পাস করা হয়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কর্মময় জীবন তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আগামী ১৫ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অস্বস্তি চলছিল আগে থেকেই
আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করে গত বছরের আগস্টে। সাতটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যে মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াসহ অনেকে। জোট গঠনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জোট নেতারা। এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও একমত হয়েছে জোটটি।
কিন্তু জোটের শরিক দল নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে অন্যদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। জোট নেতারা বলছেন, রেজা কিবরিয়া ও নুরের মধ্যকার দ্বন্দ্বের প্রভাব গণতন্ত্র মঞ্চেও পড়ছে। সর্বশেষ জোটের কয়েকটি প্রোগ্রামে অংশ নেননি নুর ও তার অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে নুরদের দ্বন্দ্ব দিনদিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। যা গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যকার দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরকম মতবিরোধ নিয়ে আগামীতে পথচলা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও এত দিন দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চায়নি কোনো পক্ষ।
এর আগে, গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা বলেছিলেন যে জোট গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই যুক্ত হতে আগ্রহী ছিল মোস্তাফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। কিন্তু ওই সময় রেজা কিবরিয়া ও নুরের আপত্তির কারণে তাদের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। তাছাড়া ওই সময় মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হতে আরও কয়েকটি দল আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তাদের ব্যাপারেও নূরদের আপত্তি ছিল।
নুর ও রেজা কিবরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে তাদের গণঅধিকার পরিষদের মধ্যেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। এ কারণে গণতন্ত্র মঞ্চের বেশ কিছু প্রোগ্রামে রেজা কিবরিয়া বা নুর কেউ অংশ নেননি। এর বাইরে নুরের দলের যারা প্রোগ্রামে অংশ নেন তাদের মধ্যে ‘ফোকাস’ হওয়ার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে। সব মিলিয়ে নুরদের নিয়ে মঞ্চের অন্য শরিকদের সিনিয়র নেতারা এক ধরনের অস্বস্তিতে ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, আসলে নুরদের দলের বয়স বেশি নয়। বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা বেশিদিন এক থাকতে পারে না। আবার সেখানে সবাই নেতা। এ কারণে কারও একক নেতৃত্ব মেনে নিতে তাদের মধ্যে প্রায়ই সমস্যা দেখা যায়।
এএইচআর/ওএফ