দেশে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যা শুরু হয়েছে : ফখরুল
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরে নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমানে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যা ফের শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ইন্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতার দিবস ও বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের দীপ্ত শপথের মুক্তিযোদ্ধা গণ-সমাবেশের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা দল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে পত্রিকাতে একটা খবর আছে, অনেকে দেখেছেন, নওগাঁর ৩৫ বছর বয়স্ক একজন নারী, যিনি সরকার অফিসে চাকরি করেন। তাকে র্যাব তুলে নিয়ে গেছে। তারপরে দেখা গেছে, হাসপাতালে নেওয়ার একপর্যায়ে তিনি মারা গেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন- তার মাথার ভেতরে অনেক রক্তপাত হয়েছে এবং কপালে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই বাংলাদেশে একজন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই র্যাবকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। সেই র্যাবের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ উঠেছে ওই নারীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে সেই নারী বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই সরকারের যত আইন, যত কাজ হচ্ছে মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন করার জন্য ও ভিন্ন মতকে দমন করার জন্য।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরে নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন আবার শুরু হয়েছে, কেন? কারণ আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমস্ত কর্মকর্তাদের (যাদের বিরুদ্ধে বিচারবহিভূর্ত হত্যা, গুম-খুনের অভিযোগ উঠেছে) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই সরকার এসবের বিচার করে না। আজকে তাদের আরও পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তারা অনেক বড়-বড় পদ পাচ্ছেন। বলা হচ্ছে- এরপর তাদরকে এমপি নমিনেশন দেওয়া হবে। কাউকে-কাউকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও করা হবে। এগুলো আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই।’
‘এখানে অনেকে আছেন, তারা জানেন ৭২ সালে তারা কী করেছিল। একইভাবে লুটপাট করেছে, একইভাবে জনগণের সম্পদকে লুট করে নিয়েছে। এমনকি শিশুদের জন্য বিদেশে থেকে যে পাউডার মিল্ক এসেছিল, সেটিও চোরাচালান করেছে তারা। এসবের যারা প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে হত্যা করেছে তারা। সেইদিনও তারা আজকের পুলিশ, র্যাবের মতো রক্ষী বাহিনী তৈরি করেছিল। সেই বাহিনী দিয়ে ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক ও তরুণদের হত্যা করেছিল। সেই বাংলাদেশে আমরা চাইনি। কিন্তু আজকে সেই বাংলাদেশই আওয়ামী লীগ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।’
দেশে এখন কোনও আইনের শাসন নেই বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই। অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সত্যিকার অর্থে একটা মধ্যযুগীয় বর্বর দেশে পরিণত করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৯৬ সালের নির্বাচনের আগে মাথায় হিজাব আর হাতে তসবি নিয়ে ভোট চেয়েছিল। আর ২০০৮ সালে বলেছিল, ১০ টাকায় চাল খাওয়াবো, এখন চালের দাম কত? তেল-ডালের দাম কত? প্রতিটি জিনিসের দাম আজকে বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে। আসলে এই যুদ্ধের কারণে নয়, তাদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এতো উন্নতি করলাম, এটা তাদের চোখে পড়ে না। আরে আমার পেটের কী উন্নতি হয়েছে, সেটাই বুঝতে পারে না। পদ্মা সেতু ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। এখন এক বছর না যেতেই আবার রাস্তা বন্ধ করে পদ্মা সেতুর রিপেয়ারিং শুরু হয়ে গেছে। এমন কোনোও খাত নেই, যেখানে চুরি হচ্ছে না।’
নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবার নাটক করে, আমাদেরকে সংলাপের জন্য চিঠি পাঠায়। আমরা যদিও এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে, এই ধরনের বিষয়ে মানুষকে প্রতারণা ও ভুল বোঝানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা বলেছি, নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কথা বললে সেই বিষয়ে হবে, অন্য বিষয়ে নয়।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও আব্দুস সালাম।
এইচআর/কেএ