‘বর্গী’দের মতো লুটের আসর বসিয়েছে আওয়ামী লীগ : ফখরুল
আওয়ামী লীগ দেশে ‘বর্গী’দের মতো লুটের আসর বসিয়েছে বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি দাবি করেন, আজ আওয়ামী লীগের সব মানুষ পাগল হয়ে গেছে, মরিয়া হয়ে গেছে। তারা দ্রুত দেশের সব সম্পদ লুট করে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। ঠিক যেভাবে বর্গীরা আগে আমাদের দেশে এসে সব সম্পদ লুট করে চলে যেত। আজ ঠিক সেভাবেই আওয়ামী লীগ লুটের আসর বসিয়েছে, উৎসব করছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সে মানুষগুলোকে আজ স্মরণ করা হয় না। আমাদের দুঃখ হয়, যারা বিভিন্ন সময় স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, লাখ-লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাদের একবারের জন্যও আজ স্মরণ করা হয় না। আজ জনগণের ওপর এমন একটি সরকার চেপে বসে আছে, যারা নিজেদের ছাড়া অন্যদের মেনে নেয় না। তারা দাবি করে, শুধুমাত্র এক ব্যক্তি, একটি দল এ দেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে এসেছে। যে কথাটা একেবারেই সত্য নয়।
তিনি বলেন, আমরা খুব ভালো করেই ইতিহাস জানি, দীর্ঘকাল ধরে অনেক নেতা ও মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। কয়েকদিন আগে আতাউল গণি ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল, তার নাম একবারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি। যার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক হিসেবে চিহিৃত করার সমস্ত প্রচারণা চালাচ্ছে এ সরকার। এমনকি তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সেটাও অস্বীকার করতে চায় তারা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যিনি প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেছিলেন, সেই মাওলানা ভাসানীকেই আজ স্মরণ করা হয় না। আমাদের খুব দুঃখ হয়, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই তাজউদ্দিনকেও আজ স্মরণ করা হয় না। আসম রবের কথা তো উচ্চারণও করেন না। কারণ তিনি ভিন্ন দল করেন।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি মুক্ত সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশ নিয়ে বাস করার জন্য। সেটাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে আজ একটি দল, একটি পরিবার এবং শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির কথা উচ্চারিত হয়।
আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য আবারও একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা। সেটা করতে গিয়ে তারা সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় এসেছে, চট্রগামে চালের জন্য অপেক্ষা করতে করতে দুই বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে গেছে। আজ যখন সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে, তখন ‘অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির বাড়ি গিয়ে হাওরের ২৩-২৪-৪০ পদের মাছ দিয়ে উৎসব করছেন- এটা মানুষের সঙ্গে পরিহাস।
ভারতের এক বিতর্কিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে সরকার বিদ্যুতের চুক্তি করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর ফলে দুইশ টাকার কয়লা চারশ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আজ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর দাম আরও বেড়ে যাবে। সরকার আইন করেছে, গণশুনানী না করেই আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে। এ সরকার জনগণের টাকা লুটপাট করতেই বারবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এ অবস্থায় বসে থাকলে চলবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ আন্দোলন বিএনপি বা গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলন নয়। এটা গোটা জাতির সংগ্রাম। স্বাধীনতা, ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
এএইচআর/এফকে