‘নির্বাচনে জয় পেতে কোন্দল নিরসন করতে হবে’
• তৃণমূলকে ঐক্য করতে হবে
• আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ
• বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী
তৃণমূলের কোন্দল এবং সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সদ্য নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। তারা আগামী নির্বাচনের পূর্বে দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য দলের সভাপতিকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভার মুলতবি সভা শুরু হয়। যৌথসভার মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজের এক ঘন্টা বিরতি দিয়ে চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যৌথসভায় ২০ জন নেতা বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, রশিদুল আলম, খন্দকার গোলাম মওলা নকশাবন্দী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম, বজলুর রশিদ, সুলতানা সাফি, চন্দন শীল, খলিলুর রহমান মণ্ডল, অধ্যক্ষ জোবায়দা খাতুন পারুল প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কোনো নেতা বক্তব্য না দিলেও উপদেষ্টা ও জাতীয় কমিটির বেশিভাগ নেতার বক্তব্যে বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের মূল সমস্যা দলের কোন্দল। নির্বাচনের আগে সে কোন্দল কমাতে হবে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো নয়। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের দলের মূল সমস্যা হলো নিজেদের নেতাদের মাঝে কোন্দল। আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে সব মিটিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে আমরা আগামী নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারবো’ বলে দলের সভাপতিকে তৃণমূলের কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টারা।
বৈঠকে উপস্থিত এক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তৃণমূলে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগে সব উন্নয়ন তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক উপদেষ্টার বক্তব্যে ছিল কীভাবে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করা যায়। তাদের (উপদেষ্টা) বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বলেছেন, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে জেলার সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তার জন্য জাতীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।’
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী সংগঠন। নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি শ্রেণি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে যেতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।
এদিকে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু মুখে মুখে (দুর্নীতির কথা) বললে তো হবে না। এখন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে শুনতে হচ্ছে, যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ যে, সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়ি-ঘর ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। করোনার পরে বিশ্বমন্দার মাঝে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করতে হবে। নিজস্ব উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মন্দার কারণে সরকার অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু তারা দেশে নাম-টাম করে কিন্তু বেশ ভালোই আছেন এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করেছেন। এ টাকাগুলো কোথা থেকে এলো? এগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা। এটা তো বাস্তব কথা।’
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন দুপুর ২টায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এ যৌথ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিন যৌথসভা মুলতবি করা হয়। আজ সে মুলতবি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এমএসআই/এফকে