গণতন্ত্র মঞ্চের ‘গণঅবস্থান’ ১১ জানুয়ারি
ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কারও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে গণমিছিল শেষে কাকরাইল মোড়ে এক সমাপনী সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
এর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিলটি পুরানা পল্টন, বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শহীদুল্লাহ কায়সার, রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাবলু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের গণমিছিল শেষ করেছি। ১১ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে, গুম করে, মামলা, হামলা করে তারা ক্ষমতায় আছে।
তিনি বলেন, ভোট চুরির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, বলেছিলেন তার ওপর ভরসা রাখতে। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। ২০১৮ সালে মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে কলঙ্কজনক একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসেন।
তিনি আরও বলেন, মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন আর গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তারা ব্যালট বাক্স ভরেছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চলে, কিন্তু সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক ঘটনা আর কখনও ঘটেনি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই মুনাফিক সরকারের কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। পদত্যাগ করার পরে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটা কারণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভোট চোরকে ক্ষমা করে না, বাংলাদেশের মানুষ ভোট ডাকাতদের ক্ষমা করে না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাই।
রংপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে মানুষ প্রমাণ করেছেন ভোট ডাকাতদের মানুষ ক্ষমা করে না উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, এভাবে যদি ৫০ শতাংশ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় অধিকাংশ থেকে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
সাইফুল হক বলেন, বিএনপি ১০ দফা দিয়েছে, আমরা ১৪ দফা দিয়েছি। ইতোমধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমাদের মধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ১০ দফা ও ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি। আমরা স্বল্পতম সময়ে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করব। সেই ভিত্তিতে সরকারের পরিবর্তন, অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মতো জাগরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আমরা রক্ষা করব, বাংলাদেশের জনগণকে আমরা রক্ষা করব।
গণজাগরণ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে এই বাম নেতা বলেন, এই গণজাগরণে ২০২৩ সালে প্রথমাংশের মধ্যে এই সরকারকে নাকে খত দিয়ে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করব। জনগণকে রক্ষা করব- সেই লড়াইয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে আছে, থাকবে। সব বিরোধীদল, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎ ধারায় রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বক্তব্য রাখেন।
টিআই/এএইচআর/এমএ