গোলাপবাগে সমাবেশ, তবুও বন্ধ নাইটিঙ্গেল-ফকিরাপুল সড়ক
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। তবে যানজট, যান চলাচল বন্ধ, ও জনশৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় পল্টনে অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। অনেক নাটকীয়তার পর সমাবেশের অনুমতি মেলে গোলাপবাগ মাঠে। কিন্তু পল্টন সড়ক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধই রাখা হয়েছে।
আজ (শনিবার) সকালে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়- নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়ক বন্ধ রেখেছে পুলিশ। দুই প্রান্তেই শুধু চলাচল করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জরুরি সেবার যানবাহন। ঢুকতে পারছে না গণমাধ্যমের গাড়িও। পল্টনের অলিতেগলিতে পর্যন্ত মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান, এপিসিসহ জটলা-সমাবেশ ছত্রভঙ্গের সব উপকরণ।
যোগাযোগ করা হলে পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদিন আগেই যেহেতু এখানে সমাবেশ কেন্দ্রীক বিশৃঙ্খলা হয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতার চেষ্টা হয়েছে, সেজন্য জননিরাপত্তা রক্ষায় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওসি বলেন, আজ বিএনপির সমাবেশ গোলাপবাগে। প্রশ্ন উঠতেই পারে পল্টনের সড়ক তবে কেন বন্ধ? পুলিশ জননিরাপত্তাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপির দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে। সমাবেশ গোলাপবাগে হবে, পল্টনে নয়। এখানে যাতে জননিরাপত্তা স্বাভাবিক থাকে সেজন্যই সড়ক বন্ধ রাখা। এটা সাময়িক। সমাবেশ শেষে আবারও খুলে দেওয়া হবে সড়ক। জননিরাপত্তা বিধানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। আশা করছি এই এলাকায় কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে নয়াপল্টনের এ রাস্তা বন্ধ থাকলেও যেসব সড়ক খোলা রয়েছে সেগুলোর পরিস্থিতিও অন্যান দিনের মতো নয়। সকালে আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, সংসদ মোড়, প্রগতি সরনি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকায় বাস প্রায় চলছেই না। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চললেও অন্যান্য দিনের চেয়ে সেগুলোর সংখ্যাও কম।
সকালে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যারা বাসা থেকে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে একটি বাসের দেখা মিলছে। অবশ্য রাস্তায় মানুষের সংখ্যাও অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।
১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য বিএনপি শুরু থেকেই নয়াপল্টনের সড়ক ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর সরকার শুরু থেকেই বলে আসছিল নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
তবে সোহরাওয়ার্দীর বিষয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। তারা আরামবাগ ও সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট স্কুলের মাঠের প্রস্তাব দিলেও পুলিশ তাতে রাজি হয়নি।
এরইমধ্যে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। এতে একজন নিহতও হয়। সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ এবং ওই এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের হটিয়ে দিয়ে নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সাথে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে তারা নয়াপল্টনের পরিবর্তে ঢাকার কমলাপুরে স্টেডিয়ামে সমাবেশের প্রস্তাব দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুরের বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এসবের পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তুলে নেওয়ার ৮ ঘণ্টা পর ডিবি তাদের আটকের কথা স্বীকার করে। আর দুপুর আড়াইটার পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জেইউ/এনএফ