ক্ষমতার বলয়ে ১৩ বছর, আওয়ামী নেতৃত্বে নতুন মুখ কম
আওয়ামী লীগের সভাপতি কে হবে- এটা নিয়ে আলোচনা কিংবা বির্তকের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মতো দেশে যেখানে বিভাজিত সমাজ এবং পারস্পরিক গ্রুপিং ও দলাদলি রয়েছে এবং এগুলো যখন স্কুল কমিটিতেও হয়, সেখানে ঐক্যের জন্য তো একটা জায়গা লাগবে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে আরম্ভ করে কানাডা কিংবা আমেরিকাতেও দলীয় ঐক্যের খাতিরে রাজনৈতিক পরিবারগুলোকে সামনে রাখা হয়। আমাদের দেশে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলটি নিয়মিতভাবে চারটি জাতীয় কাউন্সিল করেছে। এতে কেন্দ্রীয় রাজনীতি সুসংগঠিত হয়েছে, বেড়েছে নেতৃত্বের বলয়। দীর্ঘ ৭৩ বছরের রাজনৈতিক দলটির প্রতি সমর্থকদের পাশাপাশি বেড়েছে দলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসা। দুর্দিনে দলের পাশে থাকতে প্রস্তুত এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাও এখন কম নয়। আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ২২তম জাতীয় কাউন্সিল।
টানা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলেও অতীতে দলটির নতুন নেতৃত্বে দুর্দিনের অনেক নেতার ঠাঁই হয়নি বলে একটা ‘অনুচ্চারিত’ অভিযোগ আছে। গত চার সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির ৩১২ পদের মধ্যে মাত্র ২৪.৬৭ শতাংশ ছিল নতুন মুখ। কমিটিগুলোতে বেশি হয়েছে পদের রদবদল। অর্থাৎ ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরা পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছেন। দেখা গেছে, ২১.১৫ শতাংশ নেতার পদ পরিবর্তন হলেও তারা কমিটিতে থেকে গেছেন। আগের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এমন নেতার সংখ্যা খুব কম। অঙ্কের হিসাবে সেটি কেবল ১৯.২৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন : কৌশল-অপকৌশল-কূটকৌশল
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বরাবরের মতো কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক পদে দুই বার পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৮ সালের এক/এগারোর জরুরি সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয় লাভের পর দলের জাতীয় সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব উপহার দেন শেখ হাসিনা। তখন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মতের বিরুদ্ধে অবস্থান করে সংস্কারপন্থী হওয়ায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে যদিও কয়েকজনকে ফেরান শেখ হাসিনা। ১৮তম ও ১৯তম সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সংসদ ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট এবং ২০তম ও ২১তম জাতীয় সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সংসদ করা হয় ৮১ সদস্যের। চারটি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব এসেছে তুলনামূলক কম। আগের কমিটির লোকদেরই নতুন কমিটিতে রেখে দেওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল।
২১তম জাতীয় কাউন্সিল (২০১৯)
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। এটি ছিল দলের ২১তম কাউন্সিল। ওই বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম অধিবেশন এবং পরদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে আওয়ামী লীগের শীর্ষপদে রদবদল হয়নি। শেখ হাসিনাই ফের আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্নিবাচিত হন। নতুন কমিটিতে পুরাতন কমিটির ১৬ জনকে বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়। আর দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও হঠাৎ রাজনীতিতে পা রাখা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ১৭ জনকে নতুন করে কমিটিতে যুক্ত করে দলের হাইকমান্ড।
আরও পড়ুন : রাজনীতি কি মরণ খেলা?
এই কমিটিতে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান নতুন করে জায়গা পান। সভাপতি মণ্ডলীর ৫ সদস্য মৃত্যবরণ করায় ৫ জনকে পদোন্নতি দিয়ে শূন্য জায়গা পূরণ করা হয়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানকে পদোন্নতি দিলে পরবর্তীতে ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে দিয়ে সেই দুই পদ পূরণ করা হয়। অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, আইন বিষয়ক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে রদবদল করা হয়। মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদ দেয়া হয় নতুন একজনকে। সম্পাদকমন্ডলীর পদে শুধু একজনকে নতুন করে নেয়া হয়। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজনকে বাদ দিয়ে দুইজনকে নতুন করে স্থান দেয়া হয়। একজনকে পদোন্নতি দিয়ে তিনজনকে রদবদল করা হয়। চলমান কমিটিতে নতুন নেতৃত্বের মধ্যে এসেছেন উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান। এছাড়া আরও ১৬ জন নতুন মুখ এই কমিটির বিভিন্ন পদে যুক্ত হন। পদ পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ১৬ জন নেতাকে। বাদ দেয়া হয় ৮জনকে।
২০তম জাতীয় কাউন্সিল (২০১৬)
২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন কাউন্সিলররা। এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরিধি বাড়িয়ে ৮১ করা হয়েছে। এতে সভাপতিমন্ডলীর পদের সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৯, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ জনের পরিবর্তে ৪ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বাড়িয়ে ৮ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য দুজন বৃদ্ধি করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত করা হয়। তিনি ২০১২-১৬ কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন
২০১২-১৬ কমিটিতে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন এমন ৫ জন ২০১৬-১৯ কমিটিতে স্থান পাননি। তারা হলেন- সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সতীশ চন্দ্র রায়, নূহ উল আলম লেনিন ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ ৫ জনকে রদবদল করা হয়। তারা হলেন- নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, অ্যাড. আব্দুল মান্নান খান, অ্যাড. আব্দুল মতিন খসরু। নতুন করে কমিটিতে জায়গা পান শ্রী পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য ও শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন।
২০১৬-১৯ নতুন কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের সংখ্যা ১টি বৃদ্ধি করা হয়। সেখানে নতুন করে যুক্ত হন আব্দুর রহমান। তিনি ২০১২-১৬ কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুইজনকে বিয়োগ করা হয়েছিল। পদোন্নতিতে এ কে এম এনামুল হক শামীম ও নতুন নেতৃত্বে দলে স্থান পান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। বীর বাহাদুরকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বাদ দিলেও অ্যাড. মৃণাল কান্তি দাসকে নতুন কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পদে রদবদল করা হয়।
অন্যদিকে অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক পদে আ হ ম মুস্তফা কামালকে বাদ দিয়ে টিপু মুন্সীকে, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীকে বাদ দিয়ে ড. শাম্মী আহম্মেদকে, আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে অ্যাড. আব্দুল মতিন খসরুর জায়গায় অ্যাড. শ ম রেজাউল করিমকে, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের জায়গায় ফরিদুন্নাহার লাইলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে সরিয়ে শ্রী সুজিত রায় নন্দীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নতুন কমিটিতে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে দেলোয়ার হোসেন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুস সবুরকে নতুন করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইঞ্জি. আব্দুস সবুরের স্থলে পূর্বে ছিলেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলামের (অব) পরিবর্তে অ্যাড. মৃণাল কান্তি দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুলকে বাদ দিয়ে হারুনুর রশিদকে যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদ, নুরুল ইসলাম নাহিদকে সরিয়ে শামসুন নাহার চাঁপাকে শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক পদে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান নূরকে বাদ দিয়ে শ্রী অসীম কুমার উকিল এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলুকে বাদ দিয়ে ডা. রোকেয়া সুলতানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
আরও পড়ুন : ভোটের গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার
উপ-দফতর পদে নতুন করে দলে স্থান পান ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া। উপ-প্রচার সম্পাদক পদে আমিনুল ইসলাম আমিন। কোষাধ্যক্ষ পদে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পরির্বতে নতুন দায়িত্ব পান এইচ এম আশিকুর রহমান। এ ছাড়া নতুন দলে কার্যনির্বাহী পদে জায়গা পান ১৫ জন।
২০১২-’১৬ কমিটি থেকে ২০১৬-’১৯ কমিটিতে নতুন মুখ যুক্ত করা হয় মাত্র ২৮ জন। পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ২২টি পদে এবং বাদ দেয়া হয় ২৬ জন নেতাকে।
১৯তম জাতীয় কাউন্সিল (২০১২)
আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় এ কাউন্সিল। দলের সভাপতি হিসেবে আবারও দায়িত্ব দেয়া হয় শেখ হাসিনাকে। কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
কমিটি করার ক্ষেত্রে ২০০৯-১২ কমিটি থেকে সভাপতিমন্ডলীর ৫ সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়। তারা হলেন প্রয়াত জিল্লুর রহমান, অ্যড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, আতাউর রহমান খান কায়সার। পদোন্নতি দিয়ে রদবদল করা ৪ জনকে। এরা হলেন-মোহাম্মদ নাসিম, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন ও নূহ উল আলম লেনিন।
আরও পড়ুন : বাহাত্তরে আওয়ামী লীগ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
এই কমিটির সম্পাদকমন্ডলী পদে রদবদল করা হয় ৫টি পদে। সেগুলো হলো- আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবর্তে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ড. হাছান মাহমুদ, তিনি আগে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন, দফতর সম্পাদক পদে অ্যাড. আব্দুল মান্নান খানের স্থলে আব্দুস সোবহান গোলাপকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানকে উপ প্রচার ও প্রকাশনা এবং আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে পদোন্নতি দিয়ে কোষাধ্যক্ষ করা হয়। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ১১ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হয়।
২০০৯-’১২ কমিটি থেকে ২০১২-’১৬ কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব যুক্ত করা হয় ১২ জন, পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ১৩টি পদে এবং কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় ৭ জন নেতাকে।
১৮তম জাতীয় কাউন্সিল (২০০৯)
২০০৯ সালের ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। সেটি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলটি ছিল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম জাতীয় কাউন্সিল।
দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল পদত্যাগ করায় কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এক/এগারোর জরুরি সরকারের সময় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মতের বিরুদ্ধে অবস্থান করে সংস্কারপন্থী হওয়ায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে সেবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়।
আগের কমিটি থেকে যেসব নেতা বাদ পড়েন তারা হলেন- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মুহম্মদ মনসুর, বীর বাহাদুর এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আলী আশরাফ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক অধ্যাপিকা নাজমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন, মির্জা সুলতান রাজা, হাবিবুর রহমান খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ প্রমুখ।
আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগ : বহুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল
তবে, এদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আবদুল জলিল দলের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন। এর বাইরে আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারউজ্জামান ও আবদুর রহমানকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়।
২০০২ সালের কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদে থাকা ১৩ জনকে এ কাউন্সিলে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। আগের কমিটি থেকে ১৯ জনকে বাদ দেয়া হয়। ২০ জন নতুন মুখ কমিটিতে জায়গা পায়। এছাড়া ১৫টি পদে রদবদল করা হয়।
১৮, ১৯, ২০, ২১- এ চার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৩ বছরে। এই ১৩ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতার বলয়ে থাকার পরও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কি সঠিক গণতান্ত্রিক চর্চা হচ্ছে? এ নিয়ে প্রশ্ন আছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিশেষ করে প্রতিটি কাউন্সিল এলে নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা। কিন্তু তাদের আশা খুব একটা পূরণ হয় না। খুবই অল্পসংখ্যক নেতাকর্মী নতুন কমিটিতে স্থান পান। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ থাকে সবসময়। তবে বঞ্চিতদের কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো নতুন নেতৃত্বকে জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিরোধী দল পরিবার-কেন্দ্রিক আর ক্ষমতাসীন দল এক ব্যক্তি-কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, যার কোনো উত্তরাধিকার নেই। যদিও গণতান্ত্রিক পন্থায় উত্তরাধিকারী থাকার কথা নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সেই অর্থে গণতান্ত্রিকও নয়। গণতন্ত্র চর্চার দিক থেকে আমাদের প্রধান তিনটি দলই ভয়াবহ রকম সংকটে আছে।
আরও পড়ুন : অর্জন অনেক, চ্যালেঞ্জও কম নয়
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসে না এটা বলা যাবে না। প্রত্যক সম্মেলনে ২৫ শতাংশ হারে নতুন আসে। এটা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আমার ধারণা, এবারও তাই হবে। আওয়ামী লীগের মতো বড় সংগঠনে যেটা দরকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়র রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তরুণদের একটা সংমিশ্রণ। আমি মনে করি, বাংলাদেশে অন্যান্য রাজনীতিক দলগুলোর তুলনায় এই দিক থেকে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
ড. মীজান বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি কে হবে- এটা নিয়ে তো আলোচনা কিংবা বির্তকের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মতো দেশে যেখানে বিভাজিত সমাজ এবং পারস্পরিক গ্রুপিং, দলাদলি থাকে এবং এগুলো যখন স্কুল কমিটিতেও হয়, সেখানে ঐক্যের জন্য তো একটা জায়গা লাগবে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে আরম্ভ করে কানাডা কিংবা আমেরিকাতেও দলীয় ঐক্যের খাতিরে রাজনৈতিক পরিবারগুলোকে সামনে রাখা হয়। আমাদের দেশে তো শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে সাধারণত সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসে। তারা দুই বারের বেশি কেউ থাকেনি। আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে এই পর্যন্ত দুই মেয়াদ করার পরই নতুন কেউ সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
এমএসআই/জেএস