বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ কে?
জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দিনদিন বেড়েই চলছে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে রওশন এরশাদ ও গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ‘সরকারি মধ্যস্থতায়’ কিছুটা স্থিতাবস্থায় এলেও নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে চিফ হুইপের পদকে ঘিরে।
দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সরিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে জাপা। অন্যদিকে নিজের পদ রক্ষায় রাঙ্গা জাপা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চিফ হুইপ হিসেবে সংসদ সচিবালয়ে ব্যবহার করা অফিসটিও এখনও ছাড়েননি রাঙ্গা।
গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানী চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠক করেন দলের সংসদ সদস্য ও বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। সেই বৈঠকে স্পিকারের আশ্বাসে সংসদে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। একইসঙ্গে রাঙ্গার জায়গায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামকে প্রথমে চিফ হুইপ মনোনীত করা হয়।
সেই অনুযায়ী ফখরুল ইমামকে চিফ হুইপের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেয় জি এম কাদের। কিন্তু পরে ফখরুল ইমামকে বাদ দিয়ে কাজী ফিরোজকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করা হয়। অন্যদিকে, রাঙ্গা আদালতের আদেশের বিষয়টি তুলে ধরে কাজী ফিরোজ রশীদেকে চিফ হুইপ হিসেবে মনোনীত না করতে স্পিকারকে চিঠি দেয়। ফলে সংসদে বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ কে, কাজী ফিরোজ রশীদ নাকি মসিউর রহমান রাঙ্গা— এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ছিলাম, এখনো আছি। চিপ হুইপের জন্য বরাদ্দ করা অফিসটিও এখনো আমিই ব্যবহার করছি।
তিনি আরও বলেন, তাদের চিঠি তো কার্যকর হয়নি। তা ছাড়া জি এম কাদের জাতীয় পার্টির অবৈধ চেয়ারম্যান। আদালতের আদেশেও তাই বলা হয়েছে। সুতরাং তার কোনো আদেশ বৈধ নয়। আর বিষয়টি জানিয়ে আমি স্পিকারকেও চিঠি দিয়েছি। ফলে জি এম কাদেরের দেওয়া চিঠির কোনো কার্যকারিতা নেই।
অন্যদিকে কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে চিফ হুইপ করার বিষয়টি সঠিক নয়। এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে আদালতের আদেশের কিছু একটা বিষয় দেখলাম। এ নিয়ে না লেখাই ভালো। কারণ সঠিক খবরটি লেখা উচিত।
তবে কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করার বিষয়ে ভিন্ন কথা বলছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি স্পিকারের কোনো বিষয় না। এখানে স্পিকারের অনুমোদনের কোনো বিষয় নেই। দলীয় চেয়ারম্যান যাকে চিফ হুইপ করবেন তিনি চূড়ান্ত। কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করা হয়েছে। আমরা তার গাইডলাইনে আছি। আমরা তো রাঙ্গাকে চিফ হুইপ হিসেবে মানি না।
তিনি আরও বলেন, চিফ হুইপের সঙ্গে যেহেতু আর্থিক কোনো বিষয় নেই। ফলে, এখানে স্পিকারের অনুমোদনের কোনও বিষয় নেই। আমি যা বলেছি, তাই আইন অনুযায়ী বলেছি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন ‘তার চিফ হুইপ হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়’- এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি জানি না ফিরোজ ভাই কী বলেছেন। আর ফিরোজ ভাই যদি বলে থাকেন, তাহলে এটা সঠিক নয়।
স্পিকারকে মসিউর রহমান রাঙ্গা চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, আদালতের কি একটা মামলা আছে। এর সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আদালতের আদেশের কোনো বিষয় নেই। আর সংসদে চিফ হুইপের কোনো অফিস নেই। রাঙ্গা সাহেব এমনিতে একটি রুম ব্যবহার করেন। এখন উনি এটা ছাড়লেন কি না, তা নিয়ে আমাদের দেখার কোনো বিষয় নেই। এটি স্পিকার বুঝবেন।
এদিকে প্রথমে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করে চিঠি দেওয়ার পর আবার তাকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে কিছুটা মনক্ষুণ্ণ ফখরুল ইমাম। জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল- রওশন এরশাদের জায়গায় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। আর তার জায়গায় বিরোধীদলীয় উপ-নেতা হবেন কাজী ফিরোজ রশীদ। চিফ হুইপ হবেন ফখরুল ইমাম। কিন্তু যেহেতু বিরোধীদলীয় নেতার আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন আছেন রওশন এরশাদ। ফলে তাকে এই মুহূর্তে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানো সম্ভব নয়। যার কারণে এখন কাজী ফিরোজকেও বিরোধী দলীয় উপ-নেতা করা যাচ্ছে না। তাই ফখরুল ইমামের জায়গায় কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করা হয়েছে। কিন্তু এতে ফিরোজ রশীদ খুব যে খুশি, বিষয়টি এমন নয়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিরোধী চিফ হুইপের কোনো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেই। আবার মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাও নেই এই পদে। ফলে তিনি কোনো পতাকাও ব্যবহার করতে পারবেন না। এ কারণে পদ পেয়েও খুশি নন কাজী ফিরোজ রশীদ। অন্যদিকে আশাভঙ্গের কারণে মনক্ষুন্ন ফখরুল ইমাম।
এএইচআর/আরএইচ