ছাত্রদল-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রদলের একটি সমাবেশ ঘিরে গতকাল সকালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা। ছাত্রদলের নেতাদের সড়ক থেকে সরাতে একদিকে অ্যাকশনে নামে পুলিশ, অন্যদিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে ও বাঁশ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
ছাত্রদলের সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে তুলে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই মামলাটি দায়ের করেছে। মামলায় এজাহারনামীয় ৪৭ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকাল ১০টায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ ডেকে ছাত্রদলসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে, ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে বেশ কজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এই হামলার ঘটনায় রাতে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আটকদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে, গাড়ি ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করেছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্তে কাজ চলছে। রোববার বিকেল থেকে শাহবাগ থানা, রমনা উপ-কমিশনারের কার্যালয়সহ রমনা বিভাগের বেশ কয়েকটি থানা এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ছিল ছাত্রদলের। ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
সংঘর্ষের পর গতকাল পুলিশ অভিযোগ করে, এই কর্মসূচির বিষয়ে ছাত্রদলের আগে থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া ছিল না। অন্যদিকে ছাত্রদলের অভিযোগ পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় না। অনুমতির বিষয়ে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা এতদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন। এতদিন পর জিজ্ঞেস করছেন অনুমতির কথা। প্রেসক্লাবের সামনে কে, কবে অনুমতি নেয়? প্রেসক্লাবের সামনে অনুমতি নিয়ে সভা করতে হয়? যখন অনুমতি নেওয়ার দরকার, তখন তো নিচ্ছিই।
এদিকে ছাত্রদলের অভিযোগ গতকাল পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে তারা।
গতকালের চিত্র
পূর্বঘোষিত সমাবেশ ঘিরে গতকাল সকাল থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে পুলিশকেও দেখা যায় শক্ত অবস্থানে। এমন অবস্থায় বেলা ১১টার আগে ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলতে প্রেসক্লাবের ভেতরে গেলে সেখান থেকে কোনো সমাধান আসেনি। তখনও প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। এরপর বেলা ১১টার কিছু পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নেন। তখন পুলিশ তাদের সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার কথা বললেও তারা যেতে রাজি হননি। এরপরই পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত।
ঘটনার পর ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেছিলেন, সংঘর্ষে ছাত্রদলের ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনি নিজেও আহত হয়েছেন বলে জানান।
জেইউ/এনএফ