বিএনপি সন্ত্রাস করে না, বিশ্বাসও করে না : মির্জা ফখরুল
বিএনপি সন্ত্রাস করে না, বিশ্বাসও করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কথায়-কথায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা, বিশেষ করে আইন এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন— আমরা তো সভা-মিছিলে বাধা দেব না। কিন্তু বিএনপি যদি সন্ত্রাস করে তাহলে কি করব। বিএনপি সন্ত্রাস করে না। সন্ত্রাসে বিশ্বাসও করে না। এখন পর্যন্ত মিডিয়াতে কোথাও বিএনপির সন্ত্রাসের চিত্র আসেনি। সন্ত্রাসের যেসব চিত্র এসেছে তা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা চড়াও হয়েছে গণতন্ত্রকামী, শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। জনগণের শক্তি নিয়ে এদের পরাজিত করব।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। মহিলা দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কি অর্জন দেখছেন— জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের অর্জন এখন পর্যন্ত ১৫৩ কিউসেক কুশিয়ারা নদীর পানি। এছাড়া এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অর্জন দেখতে পাইনি। বরং যেটা দেখতে পাচ্ছি ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে, যানবাহন কেনার জন্য ভারতের কাছ থেকে। আর বলা হচ্ছে সীমান্তে হত্যা জিরোতে আনা হবে, কিন্তু যেদিন এ কথা বলা হয়েছে সেদিনই দিনাজপুর সীমান্তে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। আর দুজন নিখোঁজ রয়েছে। এই হচ্ছে দৃশ্যমান প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন: ছাত্রদল নেতা শ্রাবণকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে এই সফরের পূর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন— ভারত সরকারকে বলেছি যেকোনো ভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু বিএনপি সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, এটাও বিশ্বাস করি যে গণতান্ত্রিক দেশগুলো সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে সমুন্নত, জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা তাদের ভূমিকা অক্ষুণ্ণ রাখবে। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ, গণতান্ত্রিক দেশ, আমরা বিশ্বাস করি ভারত তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মহিলা দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে তারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য ভূমিকা রেখেছে। এখনো আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতন দমন-পীড়ন সহ্য করে, জেল-জুলুম সহ্য করে তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছে। আজ এই সময়ে যখন ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। মিথ্যার মাধ্যমে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, বিশ্বকে ভুল বুঝিয়ে, বিশ্ব বিবেককে ভুল বুঝিয়ে তারা তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্যই জনগণের উপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের মাতা, যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এখনও অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তাকে চিকিৎসা না দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।
৩০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো যখন আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তখন ভোলায় আমাদের দুজন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে শাওনকে হত্যা করা হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে, তখন সরকার তাদের পুলিশ বাহিনী এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করে হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে আবার সেই আগের মতো গায়েবি মামলা করছে। এখন তারা নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছে, অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে।
রানি এলিজাবেথের মৃত্যু সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করেছি, আমরা মনে করি তিনি কিংবদন্তি রানি ছিলেন। রয়াল প্রশাসক হিসেবে ছিলেন মিথাইনে। দীর্ঘকালের ঐতিহ্য চলে গেল। গণতন্ত্রের যে বিকাশ, গণতন্ত্রের যে রক্ষণাবেক্ষণ ও সুরক্ষা করা যায়, তার শাসন আমলে দেখেছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ প্রমুখ।
এএইচআর/এসএসএইচ