অন্য রাষ্ট্রের প্রভাব সহ্য করিনি, করব না : ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের প্রভাব বা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ কখনো সহ্য করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না— এমনটি বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার (২২ আগস্ট) দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামী, মুক্তিকামী মানুষ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পবিত্র সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো— সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এ নীতির কোনো বিকল্প নেই, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সহযোগিতা-সহমর্মিতা মানবিক মূল্যবোধ, নীতি ও আদর্শের মেলবন্ধন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করি এবং বন্ধুত্বের গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো সহ্য করেনি, করবেও না। আওয়ামী লীগ সর্বদা সব ধরনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধিতা করে আসছে এবং সেজন্য চরম মূল্যও দিতে হয়েছে এ সংগঠনকে। তারপরও আওয়ামী লীগ দেশের ভেতরে ও বাইরে কোনো শক্তির কাছে মুচলেকা দিয়ে পথ চলে না।’
তিনি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বিকশিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের অতন্দ্র প্রহরী।’
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতারা তাদের চিরায়ত মিথ্যাচারের রাজনীতি অব্যাহত রেখে নানামুখী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা অন্তরে ১৫ আগস্টের নির্মম-নিষ্ঠুর পাশবিক মানসিকতা এবং ২১ আগস্টের বর্বরতা ও পৈশাচিকতাকে ধারণ করে। ঐতিহাসিকভাবেই বিএনপি স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং জঙ্গি-সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে লালন করে আসছে।’
গণতান্ত্রিক অধিকার ও মূল্যবোধের প্রতি দায় সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলে। বিএনপি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কখনো হৃদয়ে ধারণ করে না এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে তা চর্চা করে না বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘তারা কখনোই প্রথাসিদ্ধ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেনি। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংবিধান লঙ্ঘন করে বন্দুকের নলের মুখে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। তাদের প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। জিয়াউর রহমান একইসঙ্গে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থেকে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছিলেন, কারফিউ মার্কা গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে এবং সামরিক শাসন বলবৎ রেখেই একাধিক প্রহসনের নির্বাচন করেছিলেন।’
বিএনপিকে হত্যা-ক্যু, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রধানতম পৃষ্ঠপোষক আখ্যা দিয়ে কাদের বলেন, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে গণতন্ত্র, মানবিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে যেসব সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হয়েছে, বিএনপিই সেসব সঙ্কটের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে। এ অপরাজনীতির কারণে বিএনপি যখন জনরোষের মুখে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন মনে করেছে— তখনই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি ক্ষমতায় থাকাকালীন জনরোষের মুখে তাদেরকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।’
বৈশ্বিক সঙ্কটকে পুঁজি করে জাতীয় রাজনীতিতে সঙ্কট সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে যখন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তখন এ বৈশ্বিক সঙ্কটকে পুঁজি করে জাতীয় রাজনীতিতে সঙ্কট সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আর এ ষড়যন্ত্রের মূলে রয়েছে ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড খুনি তারেক রহমান ও তার দল বিএনপি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণমানুষের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তির উৎস হলো এদেশের জনগণ। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও গণস্বার্থকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এদেশের জনগণ ‘দীর্ঘ স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেয়েছে’ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই চরম দারিদ্র্য, মঙ্গা-খরা ও দুর্ভিক্ষ জর্জরিত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার নির্মম অভিঘাত থেকে মুক্ত হয়ে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় অদম্য আজকের বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বার্থ সংরক্ষণ ও মুক্তির প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সর্বদা অটল-অবিচল; স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।’
এইউএ/আরএইচ