বঙ্গবন্ধুর শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। সুখে, দুঃখে সবসময় পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশের জনগণের জন্য এবং বেগম মুজিবের কর্মকাণ্ডও ছিল এদেশের মানুষের জন্য। তিনি ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য না করতেন, অনুপ্রেরণা না দিতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এতো ত্যাগ স্বীকার করা সম্ভব ছিল না।
আজ (সোমবার) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন সহজ, সরল মেয়ে। বেগম মুজিবের উল্লেখ করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তার অসামান্য বিচক্ষণতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন না কিন্তু নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেছেন। যেকোনো বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শগুলো ছিল অবিস্মরণীয় এবং বাস্তবসম্মত।
তিনি বলেন, বেগম মুজিব দলের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বেগম মুজিব একহাতে সব সামলেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার চালিয়েছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। শুধু ঘরের কাজ করেই ক্ষান্ত হননি বরং রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
• আরও পড়ুন : ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গমাতার মতামত গুরুত্ব পেয়েছিল
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বারবার বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাদের ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধুকে নির্যাতন করলে হয়তো উনি স্বাধিকার আন্দোলন থেকে সরে যাবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও তার অনুপ্রেরণা ছিল তার ঘরে। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর সাথে জেলখানায় দেখা করতে যেতেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খবর দিতেন এবং এর পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের জন্য দিকনির্দেশনা নিয়ে আসতেন।
তিনি বলেন, ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আহ্বান করা হয়েছিল। সকলের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ছিল যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আসবে। কী সেই নির্দেশনা আসতে পারে? কেউ বললেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন। আবার কেউ বললেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বিচলিত হয়ে গেলেন। দুপুরে জনসভায় যাওয়ার আগে বেগম মুজিব সে সময় তাকে বলেছিলেন, পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গোটা জাতি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো, যেটা ভালো বুঝো সেরকম করবে। অন্যের পরামর্শের দরকার নেই।
হানিফ বলেন, দেশের স্বাধীনতা লাভের পেছনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল মহীয়সী নারী বেগম মুজিবের। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। পঁচাত্তরের কাল রাত্রিতে যখন ঘাতকরা গুলিবর্ষণ করেছিল তিনি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যারা পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসর ছিল তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরে ইনডেমনিটি জারি করে বঙ্গবন্ধুর বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই যারা আত্মস্বীকৃত খুনি তাদের বিচার করতে গেলে যারা চক্রান্ত করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে। এই মুখোশ উন্মোচন হলে জিয়াউর রহমানের নাম চলে আসবে। আর এজন্য বিচার বন্ধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফেরার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে। কিছু দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কিত করতে হবে।
• আরও পড়ুন : বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক পেলেন ৫ নারী
বঙ্গমাতার হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হানিফ বলেন, যারা গণতন্ত্রের সবক দেন, মানবতার কথা বলেন তাদের কাছে আমাদের জাতির পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ আপনাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের অবস্থান বড়ই বেমানান।
তিনি বলেন, দেশ থেকে বিভক্তি দূর করতে হলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুনিদের মুখোশ উন্মোচন জরুরি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে কিন্তু তাদের কুশীলবদের মুখোশ এখনও উন্মোচন হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জাতিকে বিভক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে খুনিদের চিনতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে তদন্ত কমিশন গঠন করে কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক। তরুণ প্রজন্ম খুনিদের চিনতে পারলে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি।
এতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায় ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এইউএ/এনএফ