সরকার পতনের আন্দোলনে ‘গণঅধিকার পরিষদ’কে পাশে পাবে বিএনপি
সরকার পতনের আন্দোলনে ‘গণঅধিকার পরিষদ’কে বিএনপি পাশে পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকারকে সরানোর জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। আমরা একমত হয়েছি এই আন্দোলন আমরা যুগপৎ করব।
বুধবার (৩ আগস্ট) পল্টন গণঅধিকার পরিষদে কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টা সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে সবগুলো বিষয়ে একইমত ধারণ করেন। বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, সেই ব্যাপারে তারা একমত। আমরা একমত হয়েছি যে, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না। কারণ তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের অর্জিত সব অর্জনগুলো- গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সাম্য ও সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায় বিচারের অধিকার সব ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রভৃতি বিষয়ে গণঅধিকারের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি জনগণের পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে হবে। যা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে। তারপর আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। এ বিষয়টি আলোচনা মধ্যে আছে।
গণঅধিকার পরিষদে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, খুব ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং অনেক ব্যাপারে একমত হয়েছি। বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর বুঝেছি যে, আমরা একই পথে, একই চিন্তায় আছি। খুব বেশি ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আমরা সেটা মনে করি না। অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, আরও হবে। একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দুই দলের অবস্থান খুব কাছাকাছি এবং একসঙ্গে কাজ করব।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, দেশের চলমান সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলমান সংকটকে যেভাবে আমরা দেখি তাতে বিএনপির সঙ্গে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নেই। আজকের আলোচনায় আমাদের দশটি বিষয় ছিল। সেই বিষয়গুলোতে আমরা একমত পোষণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা এবং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
সংলাপে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান, হাবিবুর রহমান, রাশেদ খান, ফারুক হাসান ও জিসান মহসিন।
সরকার বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়তে তুলতে বিএনপি গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। এ পর্যন্ত ২২টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে দলটি। আসম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর গণফোরাম, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন। আর ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দল (ডিএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ন্যাপ-ভাসানী ও বাংলাদেশ ন্যাপ।
এএইচআর/আইএসএইচ