বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব আর নেই
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল আর নেই। শনিবার (৩০ জুলাই) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বনানীতে তার বাস ভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান রুপম।
তিনি বলেন, বাবা দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বিগত ১৪ দিন ধরে ইনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বাসায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার রাতে হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে আমরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু তার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
রুপম জানিয়েছেন, তার দাফন বরিশালে করা হবে। শনিবার রাতেই তারা বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। বরিশালে এনে সিদ্ধান্ত হবে কখন জানাজা ও দাফন হবে।
আহসান হাবিব কামাল স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শোক বার্তায় মির্জা ফখরুল বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের বলিষ্ঠ অনুসারী মরহুম আহসান হাবিব কামাল বরিশাল বিভাগে সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নিকট সমাদৃত ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন ও নীতিবান মানুষ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি কখনোই তার নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মরহুম আহসান হাবিব কামাল দেশের গণদাবির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা এলাকাবাসী ভুলে যাবে না বলেও উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার অবদান কখনো ভুলবার নয়।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎসজীবী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ১৯৯১ সাল থেকে বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান ও প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ১৪ বার বাজেট দিয়েছেন তিনি।
তবে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানার দণ্ডাদেশ দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ১১ অক্টোবর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন তৎকালীন জেলা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা আবদুল বাছেত।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, ১৯৯৫ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩ জুন পর্যন্ত পৌর এলাকার টেলিফোন শিল্প সংস্থা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতের নামে ভূয়া জাল প্যাড তৈরি করে, ভূয়া দরপত্রের মাধ্যমে ভূয়া ঠিকাদার নিয়োগ দেখিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে বরিশাল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চলতি হিসাব খুলে টেলিফোন সংস্থার দেওয়া ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৪টি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে ১১ লাখ ৯৯ হাজার টাকার রাস্তা মেরামত দেখিয়ে বাকি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
এই মামলায় সাজা হওয়ার পর ২০২১ সালের ১৫ জুন বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনলাভের পর তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যান এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মেহেদী/এএইচআর/ওএফ