ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে ২০০৮ সালের মতো বিজয় আসবে : তথ্যমন্ত্রী
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার মানসিকতা লালন করার আহ্বান জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৮ সালে দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বলে নেত্রীকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও যদি দল ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে ইনশাল্লাহ ২০০৮ সালের মত বিজয় আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবরণ দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুন জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রও মুক্তিলাভ করেছে।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার দরকার নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দরকার। এই দেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য শেখ হাসিনাকে দরকার আছে। আমরা সেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব যদি মানুষকে জিম্মি, বিভ্রান্তি, জ্বালাও-পোড়াও করা এবং নেতিবাচক রাজনীতি বন্ধ হয়। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিহত করতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেনা সমর্থিত তৎকালীন ১/১১ সরকারের সব অন্যায়, অবিচার এবং দুর্নীতির একমাত্র আপসহীন প্রতিবন্ধক ছিলেন বলেই তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেদিন প্রকৃতপক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। গণতন্ত্রের পায়ে সেদিন শেকল পড়ানো হয়েছিল।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে অন্যায় কাজগুলো করছিল, দুর্নীতির সঙ্গেও তাদের অনেকেই যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে তখন একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাই কথা বলেছেন। বিএনপি ও তাদের নেতারা সেভাবে প্রতিবাদ করেনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেপ্তারের কয়েকদিন পর বেগম খালেদা জিয়ার পার্সোনাল উইংয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বলল, আমাদের ম্যাডামকেও তো গ্রেপ্তার করা হতে পারে, আমরা একসঙ্গে কিছু করতে পারলে ভালো হয়। তখন আমি জবাব দিয়েছিলাম, এই সিদ্ধান্ত তো দলীয় সিদ্ধান্ত হতে হবে। এটি আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে আন্দোলন হবে। কারণ আমরা বিএনপির অনাচার-অবিচার, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম। সুতরাং আরেকটি অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার যারা অপরাধ করেছিল তাদের সঙ্গে আমরা আন্দোলন করা সমীচীন হবে কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন ছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, তখন আমাদের দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বলেছেন, কিন্তু তৃণমূলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল। যারা বেসুরে কথা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তারা অনেকে ভয়ে দলীয় প্রোগ্রামেও যেতেন না, কেউ কেউ গেলেও অপদস্থ হয়েছেন। নেত্রী গ্রেপ্তার হবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। নেত্রীও জানতেন, তিনি প্রস্তুত ছিলেন, আমি নিজেও ঘরে থাকতাম না। রাতে জায়গা বদল করে করে থাকতাম। নেত্রীকে গ্রেপ্তারের সময় সুধাসদনে সবকিছু তছনছ করা হয়েছিল। ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা গ্রেপ্তার হওয়ার পর মতিয়া চৌধুরীর মাধ্যমে দলের সভাপতির দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ওপর। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর নেত্রীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গুলশানে তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেদিন জিল্লুর চাচার সঙ্গে আমার প্রথম বাক্য বিনিময় ছিল ‘নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখন দলটা ভাঙার চেষ্টা করা হবে। দল যদি তারা ভাঙতে পারে তাহলে নেত্রীকে মুক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নেত্রীর অবর্তমানে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতা জিল্লুর রহমান অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। নেত্রী যখন কারাগারে তখন জিল্লুর রহমান ছিলেন আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তার সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়। দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় কর্মীদের মনে আশা ছিল। কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ ছিল। সারাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।
চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।
কেএম/জেডএস