বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি বিএনপির
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ‘নিরপেক্ষ কমিশন’ গঠন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৬ জুন) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি যে, এই ঘটনার জন্য অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত। এর জন্য যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করা দরকার। কী ভয়াবহ? মানুষের শরীর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, একেবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেছে, চেনা যাচ্ছে না। হঠাৎ করে যে বিস্ফোরণ হবে, এটাও তারা বুঝতে পারেনি। যার ফলে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। নিহতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনায় হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং দেশের সব কনটেইনার ডিপোতে তদারিক ব্যবস্থা চালু করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
কেমন তদন্ত কমিশন চান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিন্তু এখন পর্যন্ত অতীতের কোনো ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেখিনি। আমরা যখন নিরপেক্ষ কথাটা বলি, এটা মিন করি যে, দলনিরপেক্ষ এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, যারা এক্সপার্টস আছেন, যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, সত্যিকার অর্থে বিষয়গুলো যারা বোঝেন তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করা। দল নিরপেক্ষদের দিয়ে তদন্ত করতে হবে। আমরা চাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত।
সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর জাতীয় শোক ঘোষণা করা উচিত ছিল উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অন্যান্য যেকোনো সভ্য দেশ হলে তাই করত। আমেরিকাতে যে বাচ্চাগুলো মেরে ফেলল তখনই আমেরিকা জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের কথা টেলিভিশনে শুনছিলাম, তিনি বলছিলেন যে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। আজকে আমি এই জায়গায় প্রশ্ন করতে চাই, এই সরকার তাহলে কী করছে?
তিনি আর বলেন, তথাকথিত অবকাঠামো নির্মাণের নামে সরকারের নিজেদের পকেট ভারী করা, দুর্নীতি করা-এটাই মূল লক্ষ্য। জনগণের কল্যাণের জন্য, সেফটি-সিকিউরিটির জন্য, মানুষকে ভালো রাখার জন্য এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা যেহেতু নির্বাচিত সরকার না, সে কারণে তাদের জবাবদিহিতা নেই।
সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে দেশের পোশাকশিল্পে অথবা অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অলরেডি এই বিষয়টি নিয়ে কথা শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত সেভাবে আসেনি। এই ধরনের যে অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রয়োজনীয় যে লোকবল, প্রয়োজনীয় যেসব উপকরণ সেসব নেই।
আওয়ামী লীগ এখন শোষকের দলে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আর শোষিতের পক্ষে কথা বলার তাদের সুযোগ নেই। কারণ তারাই এখন শোষক হয়ে শোষণ করছে বাংলাদেশকে। এখন তারা লুট করছে, দুর্নীতি করছে, অর্থ পাচার করছে। মানুষের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের সামনে আর কিছুই নেই, পদ্মা সেতু ছাড়া আর বলার কিছুই নেই।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল সম্পূর্ণভাবে সরকারের ব্যর্থতার কারণে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধানমন্ত্রী একটু সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, পদ্মা ব্রিজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তাতে তো সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের সমাধান হয় না।
গত শনিবার (৪ জুন) রাত ৯টার পর ডিপোতে লাগা আগুন ও বিস্ফোরণে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ৪৬ জনের নিহত হওয়ার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের ৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সংখ্যা ৪৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে এর সংশোধনী দেওয়া হয়।
এএইচআর/জেডএস