৯০ ভাগ মানুষের আয় কমেছে : মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকার জিডিপির শুভংকরের ফাঁকি দেখিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকার সেটা অস্বীকার করছে। তাদের মন্ত্রীরা হেসে হেসে বলে, দাম যেমন বেড়েছে, মানুষের আয়ও তো বেড়েছে। কার আয় বেড়েছে? তারা জিডিপির শুভংকরের ফাঁকি দেখায়। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের আয় কমেছে আর দারিদ্র্যের হার দুই ভাগ বেড়েছে। কিন্তু সরকার মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ আহমদকে স্মরণ করে ফখরুল বলেন, মওদুদ আহমদ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তার পড়াশোনা, লেখালেখি, সর্বোচ্চ আদালতে যুক্তি উপস্থাপন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার বেশ কয়েকটি বই বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। ব্যারিস্টার মওদুদ সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এ জন্যই তাকে বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে যাতে আরেকটা ওই ধরনের (আগের নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতা) নির্বাচন করা যায়। তবে এবার আর মানুষ তা মেনে নেবে না। মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে, রুখে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার এমন পর্যায়ে গেছে, যেখানে মানুষের কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা তো কথা বলতে পারি না, সাংবাদিকরাও পারেন না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই, সাথে আবার নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। এটি তৈরি হলে আমাদের টেলিফোনের কথাও তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। আমাদের প্রাইভেসি বলে আর কিছু থাকবে না।
মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী হাসনা মওদুদ বলেন, মওদুদ আহমদ মুক্ত বেগম জিয়াকে দেখে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
মওদুদ আহমদকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি খুব শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন, বয়স অনুযায়ী তার স্বাস্থ্য ভালো ছিল। তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একদিন এই সত্য উন্মোচিত হবেই।
তিনি বলেন, আমি বেগম জিয়াকে মুক্ত দেখতে চাই। এ জন্য আমার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব আমি সেটা করব। আমি নোয়াখালী-৫ আসনের সব শ্রেণির মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এটিই হবে মওদুদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
এ সময় মওদুদ আহমদের দুটি অপ্রকাশিত বই প্রকাশের ঘোষণা দেন তিনি। একটি হলো ইংরেজিতে রচিত `রিমাইস অব ডেমোক্রেসি` আরেকটি হলো `চলমান ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্ব`।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনওয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মওদুদ আহমদ এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রপথিক ছিলেন। বাকশাল এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি সারা জীবন লড়াই করেছেন। এ সময় তিনি মওদুদ আহমদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চেয়ার স্থাপনের দাবি জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। অবস্থা এমন, বিএনপির কাউকে নির্বাচন কমিশনার করা হলে শেখ হাসিনা তার ডান হাত-বাঁ হাত পুলিশ, র্যাব দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবেই।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম। স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুকের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এএজে/এসকেডি