ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
‘ভাষা আন্দোলন’কে বলা হয় বাংলাদেশের ভিত্তি। এর মাধ্যমে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর বীজ বপন হয়েছিল এবং এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক মানসকাঠামোপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু ছয়দফার মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার চূড়ান্ত রূপ সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সুনিবিড় সম্পর্ক ছিল, যা তার গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশিত হওয়ার পর আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১৯৪৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার (কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি) বৈঠক হয়েছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কী হবে, সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতি। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যদেরও সেই একই মত। কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন, “বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক।” কিন্তু মুসলিম লীগ সদস্যরা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে এ সম্পর্কে লিখেছেন, “আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো।”
রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুরসহ আরও অনেক জেলায় আন্দোলন হয়েছিল। নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (পাকিস্তানের পক্ষে) চেষ্টা করেছিল এই আন্দোলনকে বানচাল করতে, কিন্তু পারেনি। এই আন্দোলন ছাত্ররাই শুরু করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।
সংগ্রাম পরিষদ গঠন হলে শেখ মুজিবসহ নেতাকর্মীরা কাজে নেমে পড়লেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম। আমি ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে সভা করে ঐ তারিখের তিন দিন পূর্বে ঢাকায় ফিরে এলাম। দৌলতপুরে মুসলিম লীগ সমর্থক ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে খুব মারপিট হয়, কয়েকজন জখমও হয়। এরা সভা ভাঙতে পারে নাই, আমি শেষপর্যন্ত বক্তৃতা করলাম। ঢাকায় ফিরে এলাম। রাতে কাজ ভাগ হলো—কে কোথায় থাকব এবং কে কোথায় পিকেটিং করার ভার নেব। সামান্য কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়া শতকরা নব্বই ভাগ ছাত্র এই আন্দোলনে যোগদান করল। জগন্নাথ কলেজ, মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশেষ করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করল। মুসলিম লীগ ভাড়াটিয়া গুন্ডা লেলিয়ে দিল আমাদের ওপর। অধিকাংশ লোককে আমাদের বিরুদ্ধে করে ফেলল। পুরান ঢাকায় কয়েক জায়গায় ছাত্রদের মারপিটও করল। আমরা পাকিস্তান ধ্বংস চাই এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করল।”
আন্দোলন দানা বাঁধলে ১১ মার্চ শেখ মুজিবসহ প্রায় ৭০-৭৫ জনকে বেঁধে নিয়ে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু দমানো গেল না আন্দোলন। ১৫ মার্চ তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৬ মার্চ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সাধারণ ছাত্রসভায় বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেন। পরবর্তী সময়ে অনেক প্রবীণ নেতা মন্ত্রিত্বের লোভে আন্দোলন ত্যাগ করলেও বঙ্গবন্ধুসহ অন্যরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফরিদপুর ও যশোরে কয়েকশ ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছিল। রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুরসহ আরও অনেক জেলায় আন্দোলন হয়েছিল। নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (পাকিস্তানের পক্ষে) চেষ্টা করেছিল এই আন্দোলনকে বানচাল করতে, কিন্তু পারেনি। এই আন্দোলন ছাত্ররাই শুরু করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই আন্দোলনের পরে দেখা গেল জনসাধারণও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে বদ্ধপরিকর, বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীরাও একে সমর্থন দিয়েছিল।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একদল গুন্ডা আক্রমণ করলে পলাশীর সরকারি কর্মচারীরা এসে তাদের বাধা দিয়েছিল। ফলে গুন্ডারা মার খেয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। পরে দেখা গেল, ঢাকা শহরের জনসাধারণের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার থেকে প্রোপাগান্ডা করা হয়েছিল যে, কলকাতার হিন্দু ছাত্ররা পায়জামা পরে এসে এ আন্দোলন করেছে। যে ৭০-৭৫ জন বন্দি হয়েছিল, তার মধ্যে একজনও হিন্দু ছাত্র ছিল না।
“খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিছুদিন পরে পূর্ব বাংলায় আসেন। প্রথমবার তিনি কিছুই বলেননি। কিছুদিন পরে, বোধহয় ১৯৫১ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় তিনি বক্তৃতা করলেন। সেখানে ঘোষণা করলেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। তিনি ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যে ওয়াদা করেছিলেন, সে ওয়াদার খেলাপ করলেন। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন এবং নিজেই পূর্ব বাংলা আইনসভায় প্রস্তাব পেশ করেছিলেন যে পূর্ব বাংলার অফিসিয়াল ভাষা ‘বাংলা’ হবে। তাছাড়া যাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় আইন সভায় কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা হবে। এ প্রস্তাব পূর্ব বাংলার আইনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। যে ঢাকায় বসে তিনি ওয়াদা করেছিলেন, সেই ঢাকায় বসেই তিনি উল্টা কাজ করলেন। দেশের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। তখন একমাত্র রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ছাত্রদের ছাত্রলীগ এবং যুবাদের প্রতিষ্ঠান যুবলীগ। এরা সবাই খাজা নাজিমুদ্দিনের এসব কথাবার্তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯৬)
২১ ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহীরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, আরো অনেক স্লোগান।”
পুলিশের হামলায় আহত বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে তিনি লিখেছেন, “বারান্দায় বসে আলাপ হলো এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও খবর দিয়েছি। ...আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইন সভায় মুসলিম লীগ এর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে। ...খবর পেয়েছে আমাকে শিগগিরই আবার জেলে পাঠিয়ে দেবে, কারণ আমি নাকি হাসপাতালে বসে রাজনীতি করছি। পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসলো। সেদিন ঠিক হল আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে জনমত সৃষ্টি করা শুরু হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ২১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। আমার বিশ্বাস ছিল জনগণও এগিয়ে আসবে ভাষা আন্দোলনে। কারণ, জনগণ জানে রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হলে জনগণকে দাসত্বের শৃঙ্খল আবার পড়তে হবে।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯৬-১৯৭)।
বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলেও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ হতো নিয়মিত। বঙ্গবন্ধুকে তারা খোঁজখবর দিত, বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ দিতেন। এর মধ্যে তাকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়েছে ঢাকা থেকে। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ২০৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “২১ ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহীরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, আরো অনেক স্লোগান।”
ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি হওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীর এ প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। জনাব নুরুল আমিন বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র তাকে কোথায় নিয়ে গেল। গুলি হলো মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভেতরে, রাস্তায়ও নয়। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেপ্তার করলেই তো চলত। আমি ভাবলাম, দেখবো কিনা জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ২০৩-২০৪)।
অনশনের কারণে বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার। অসুস্থ বঙ্গবন্ধু গ্রামের বাড়িতে চলে যান। জেল থেকে বের হয়ে তিনি জেনেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারির গুলি হওয়ার খবর গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে গেছে। ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল হয়েছে। দেশের লোক আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা ছাড়া উপায় নেই। কেবল তা-ই নয়, যারা বাংলা ভাষায় বিরুদ্ধে বলেছে তারা ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেছে। জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকেরাও ভয় পায়। কিন্তু শোষকেরা থামেনি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিবৃতি দিলে মুসলিম লীগের পত্রিকায় ছাপা হয়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “এদিকে মুসলিম লীগের কাগজগুলি শহীদ সাহেবের বিবৃতি এমনভাবে বিকৃত করে ছাপিয়েছে যে মনে হয় তিনিও উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হোক এটাই চান। আমি সাধারণ সম্পাদক হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যারা একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম। এতকিছুর পরেও পাকিস্তান সরকার ভাষা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। তখন সরকার দাবি করেছিল কলকাতা থেকে হিন্দু ছাত্ররা ঢাকায় এসে পায়জামা পরে ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে, এ কথা বলতেও কৃপণতা করেন এই মুসলিম লীগ নেতারা।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ২১২)।
বঙ্গবন্ধু একাধিক প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে শাসকেরা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু। ওই সভায় তিনি বলেন, “আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ দিবসে আপনারা এখানে এসেছেন, ১২টা ২ মিনিটের সময় আমি মাজারে গিয়েছি, সেখানে থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি। বাঙালিরা বহু রক্ত দিয়েছে। ১৯৫২ সালের যে রক্ত দেওয়া শুরু হয়েছে সে রক্ত আজো শেষ হয় নাই, কবে হবে তা জানি না। আজ শহীদ দিবসের শপথ নিতে হবে, যে পর্যন্ত না সাত কোটি মানুষ তার অধিকার আদায় করতে না পারবে সে পর্যন্ত বাংলার মা-বোনেরা বাংলার ভাইয়েরা আর শহীদ হবে না, গাজী হবে।”
এ কথা সত্য যে, ১৯৫২-এর ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে ‘স্বাধীনতা’। প্রাচীন যুগ থেকে বহুদাবিভক্ত এই ভূখন্ডের অসংখ্য জাতি-গোষ্ঠী ও ভাষার মানুষকে একটি ভূখন্ডের গন্ডিতে নিবিষ্ট করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রতিষ্ঠা করার প্রবক্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাধারণ ছাত্র-জনতার হাত ধরেই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’-এর অবিস্মরণীয় আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। ছাত্রজনতার কাতারে থেকে এবং দেশব্যাপী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলা ভাষার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকেই এই ভূখন্ডের আপামর মানুষ স্বাধীনতার আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়েছিল। বাংলাকে মাতৃভাষায় প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ইতিহাসে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।