ঢাকা পোস্ট হয়ে উঠুক অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ
ইউএস বাংলা গ্রুপ ঢাকার সাংবাদিকতায় নতুন সংযোজন। ঢাকা পোস্ট তাদের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি ঢাকা পোস্ট প্রকাশিত হয়ে ঢাকার সাংবাদিকতায় এক নতুন পথ নির্দেশ করেছে। দশমাসের মধ্যে ঢাকা পোস্ট অনলাইন গণমাধ্যমে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এই অনলাইন পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং এই অনলাইনের সম্পাদক কনিষ্টতম সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জ্বীবিত। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক।
ঢাকা পোস্টের বিশেষ প্রতিবেদন মীনা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তাদের একটি প্রতিবেদন ডিআরইউ পুরস্কার লাভ করেছে। তাদের ‘সীমান্তে টাওয়ার বসিয়ে তথ্য নিচ্ছে মিয়ানমার’ প্রতিবেদনটি জাতীয় সংসদে আলোচিত হয়েছে। এত স্বল্প সময়ে এই গণমাধ্যটি যে সাফল্য দেখিয়েছে তা অভাবনীয় এবং আশাজাগানিয়া।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলা দৈনিক আজকের পত্রিকাও ইউএস বাংলা গ্রুপ দ্বারা প্রকাশিত। সম্পাদক গোলাম রহমান সুশিক্ষিত এবং একজন দক্ষ সাংবাদিক। আমি শুনে সুখী হলাম, ইউএস বাংলা গ্রুপ আরও দুটি অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করছে এবং একটি টেলিভিশনও তারা শুরু করবে।
ঢাকা পোস্টের স্লোগান সত্যের সাথে সন্ধি। সুস্থসাংবাদিকতাই তাদের লক্ষ্য। এই সাংবাদিকতা এখন ঢাকার বাজারে দুর্লভ
ঢাকা পোস্টের স্লোগান সত্যের সাথে সন্ধি। সুস্থ সাংবাদিকতাই তাদের লক্ষ্য। এই সাংবাদিকতা এখন ঢাকার বাজারে দুর্লভ। এই সত্যের সঙ্গে সন্ধি করা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আজ বাংলাদেশে খুবই দরকার। শুধু ঢাকায় নয়, বাংলাদেশের প্রতি জেলা-উপজেলায় এখন দৈনিক কাগজ বের হচ্ছে।
অনেক তরুণ-তরুণী সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সত্যের পথে তাদের চালিত করা এই সংবাদমাধ্যমগুলোর দায়িত্ব। আমি ইউএস বাংলার উদ্যোগের সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করি এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় তারা একটি মডেল হয়ে উঠুক। অসত্য ও অসাধু সাংবাদিকতাকে বাজার থেকে নির্মূল করুক। এই কামনাই করি।
বর্তমানে বাজারে অনলাইন পত্রিকারই চাহিদা বেশি। অগণিত পাঠক বাটন চাপলেই সারা দুনিয়ার খবর জানতে পারে। এখন বিখ্যাত কলামিষ্টদের লেখাও অনলাইনে এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, নিয়মিত অনলাইনে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও করেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে করে থাকেন। আওয়ামী লীগেরও একটি অনলাইন প্রচার মাধ্যম আছে। অনলাইন গণমাধ্যমেরই এখন জয়জয়কার। মনে হয় অনাগত ভবিষ্যতে কাগজের সংবাদপত্র আর বেশি থাকবে না। অনলাইনই তাদের স্থান দখল করে নেবে।
বর্তমানে যেসব পত্রিকা কাগজে ছাপা হয় তারাও পাশাপাশি একটি অনলাইন ভার্সন রেখেছেন। দ্রুততর সময়ে অনলাইনে আপডেট হচ্ছে খবর। খবর পড়ার জন্য পরদিন সকালের সংবাদপত্রের জন্য আর অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও এই অনলাইন সাংবাদিকতায় শিক্ষিত হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে সংবাদ ও সংবাদভাষ্য প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই অনলাইন পত্রিকার সাহায্যে
বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও এই অনলাইন সাংবাদিকতায় শিক্ষিত হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে সংবাদ ও সংবাদভাষ্য প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এই অনলাইন পত্রিকার সাহায্যে। তাই ইউএস বাংলা গ্রুপ অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে এবং তরুণ বয়সের সাংবাদিকদের অনলাইন সাংবাদিকতায় দক্ষ করে তুলতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে জ্ঞানে গরিমায় আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে তাতে সন্দেহ নেই।
আমাদের যুগের কাগজে সাংবাদিকতা হয়তো আরও কিছুদিন টিকে থাকবে। কিন্তু অনলাইন সাংবাদিকতাই হবে আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ আমি হয়তো দেখে যাব না। কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
অনলাইন সাংবাদিকতার মাধ্যমে এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী সাংবাদিকেরাও দেশের ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে তারা সেই বলিষ্ঠ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবেন। আমার সেই শুভকামনাই রইল।
অনলাইন সাংবাদিকতার ফলে আমি লন্ডনে বসেও ঢাকার কাগজে লিখতে পারছি। একটি নয় আমি এখন পাঁচটি কাগজে লিখছি। তা না হলে পঞ্চাশ বছর আগেই আমার সাংবাদিকতা শেষ হয়ে যেত।
প্রযুক্তি আমার লেখালেখি করেছে সহজতর। ই-মেইলের মাধ্যমেই আমি আমার লেখাগুলো ঢাকার কাগজে প্রেরণ করে থাকি। অনলাইনেই সেগুলো পড়ি। এখন আর আঞ্চলিক সাংবাদিকতা নয় বিশ্ব সংবাদিকতার যাত্রা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশও এই বিশ্ব সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। তা দেশে সৎ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতাকেও আরও বলিষ্ঠ করে তুলবে। এই ভবিষ্যতের শুভসূচনাকে আমি অভিনন্দন জানাই। সাফল্য কামনা করি ঢাকা পোস্টের। প্রত্যাশা করি, ঢাকা পোস্ট হয়ে উঠুক অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ।। একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট