সদ্য ঘোষিত রেমিট্যান্স প্রণোদনা ও সূক্ষ্ম চিন্তা
করোনার কারণে রেমিট্যান্স উঠানামা হলেও ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে এই খাত। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কর্মস্থলে ফেরায় বাড়ছে প্রবাসী আয়। সেই তুলনায় প্রত্যাশিত রেমিট্যান্স যোগ হচ্ছে না। অথচ প্রায় সব প্রবাসীই মাস শেষে দেশে টাকা পাঠান, পাঠাচ্ছেন। এরমধ্যে রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকারের সদ্য ঘোষিত ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করবে। কিন্তু এর পেছনের বাস্তবতা যাচাই করাও প্রয়োজন।
ইতিপূর্বেও প্রণোদনা থেকে বেশি সুযোগ গ্রহণ করেছে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা। আর ‘অবৈধ’ পন্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণে ঝুঁকেছেন সাধারণ আয়ের প্রবাসীরা।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রবাসীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার বৃহত্তর অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতার থেকে। এসব দেশের সাধারণ প্রবাসীদের ‘টার্গেট’ করেই চলছে লাগামহীন হুন্ডি ব্যবসা। ‘মোবাইল ব্যাংকিং’ বা সরকারি অনুমোদন বিহীন ‘বিকাশ’-এর নামে এটি নিয়ন্ত্রণ করছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ সরকারি খাতায় রেমিট্যান্স হিসেবে যোগ না হওয়ার অভিযোগ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের। তবে সদ্য ঘোষিত ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার চেয়েও বহির্বিশ্ব থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ‘ফি’ মওকুফ করা গেলে রেমিট্যান্স কয়েকগুণ বাড়তে পারে।
কারণ, বহির্বিশ্ব থেকে ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠানোর বড় অন্তরায় রেমিট্যান্স ফি। প্রতিবার রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের ৩৫০ থেকে ৪৯০ টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের জন্য এটি একটি বড় অঙ্ক। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
সদ্য ঘোষিত প্রণোদনা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা পাঠালে প্রবাসীর স্বজন পাবেন ১০ হাজার ২৫০ টাকা। ২০ হাজার পাঠালে পাবেন ২০ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এজন্য তাদের দিতে হচ্ছে ফি বাবদ ৪৯০ টাকা। আবার অবৈধ পন্থায় সমপরিমাণ অর্থ তারা ‘বিকাশ’ এ পাঠালে পাচ্ছেন প্রায় ১১ হাজার টাকা। আগেই বলেছি, এই বিকাশ কিন্তু সরকার অনুমোদিত বিকাশ নয়। এটি সরাসরি হুন্ডি নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা।
ব্যাংকিং চ্যানেল থেকেও বৈদেশিক মুদ্রার চড়া মূল্য পাওয়ায় স্বল্প আয়ের প্রবাসীরা সেদিকেই যাচ্ছেন। ফলে এই সুযোগ নিচ্ছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। তারা ‘টোপ ফেলে’ স্বল্প সময়ের গ্রাহকের মোবাইলে পৌঁছে দিচ্ছে টাকা। ঘরে বসেও অনেকে এভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন হুন্ডির লেনদেন।
কোনো কোনো হুন্ডি ব্যবসায়ী দিনে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকাও লেনদেন করছে। এই কায়দায় ছোটখাটো দোকানপাট, সুপার শপ, গ্রোসারি থেকে মুদ্রা বিনিময় সহজ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকের পথে হাঁটতে চান না প্রবাসীরা।
তাই, রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে সরকারকে আরও ভাবতে হবে। মূল জায়গাগুলো বেশি ফোকাস করতে হবে। লাগাম টেনে ধরতে হবে হুন্ডির। দূতাবাসগুলো চাইলে সচেতনতার পাশাপাশি জড়িতদের শাস্তির আওতায়ও আনতে পারেন।
অন্যদিকে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে ‘ফি’ মওকুফের বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলাপ করা প্রয়োজন। কারণ রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনার চেয়েও ফি মওকুফ করা বেশি জরুরি। সহজ কথা, প্রবাসী আয়ের সঙ্গে প্রবাসীদের চাহিদা বুঝতে হবে। অন্যথায়, সদ্য ঘোষিত প্রণোদনায় লাভবান হবেন রুই-কাতলারা। সাধারণ প্রবাসীরা নিয়ম করেই ‘অবৈধ’ পথে লেনদেনে অভ্যস্ত হবেন। তাই অবৈধ লেনদেন বন্ধ করা জরুরি।
কামরুল হাসান জনি ।। সাংবাদিক