বিলিয়ন ডলারে পলিটিকো বিক্রি, আয়ের জোয়ার ভিডিওতে
মাটিয়াস ডফনার (Mathias Döpfner) ইউরোপের সবচেয়ে বড় নিউজ পাবলিশার গ্রুপ এক্সেল স্প্রিঙ্গার-এ যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। স্প্রিঙ্গারের জাতীয় দৈনিক ডি ভেল্টের এডিটর-ইন-চিফ হিসেবে। ২০০৩ সালে ডি ভেল্টে তিনি সমন্বিত বার্তাকক্ষ চালু করেন। জার্মানিতে এমন উদ্যোগ ছিল প্রথম। ১০ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে পত্রিকাটি প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখে। এরপরেই ডফনার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা বোর্ডে জায়গা পান এবং ২০০২ সালে তিনি সিইও নিযুক্ত হন।
ডফনার যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় অনুপ্রাণিত হয়ে এক্সেল স্প্রিঙ্গার গ্রুপে ‘অনলাইন ফার্স্ট’ স্লোগান যুক্ত করেন। ‘খবর সবার আগে অনলাইনে, তারপর ছাপা পত্রিকায়’—এ নীতি অনুসরণ করে বেশকিছু সুবিধা পেলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না ডফনার। তার মনে হচ্ছিল এই পরিবর্তন তো স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু নয়। ছোটখাটো কিছু নয়, ডফনার চেয়েছিলেন এক্সেল স্প্রিঙ্গারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে। আর সেটা করতে পেরেই তিনি হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ।
ডফনার বুঝতে পেরেছিলেন, গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিহিত আছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এবং সেটা শিখতে হবে গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ ‘বড় শত্রু’, প্রযুক্তি বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সিলিকন ভ্যালির টেক জায়ান্টদের কাছ থেকেই। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হলো ‘আ ট্রিপ টু সিলিকন ভ্যালি’।
২০১২ সালে ডফনার এক্সেল স্প্রিঙ্গারের তিনজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে পাঠালেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালিতে। তিনজনের একসাথে থাকার জন্য একটি বাড়ি ভাড়া করে দিলেন। ওই ঘটনায় জার্মানিতে স্প্রিঙ্গারের প্রতিযোগীরা কিছুটা ভ্রু কুঁচকালেন। কেউ ভাবলেন তিনজনকে হয়তো শাস্তি দেওয়ার জন্যই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, কারও কারও ধারণা হলো ডফনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূরে সরিয়ে ক্ষমতাকে হয়তো চিরস্থায়ী করতে চাইছেন। তবে ডফনারের চিন্তা ছিল সুদূরপ্রসারী এবং একেবারেই ভিন্ন। ওই তিন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব ছিল সিলিকন ভ্যালিতে ‘ডিজিটাল গেম চেঞ্জার’গুলো আসলে কী করছে তা দেখা এবং সেই ধারণাগুলো এক্সেল স্প্রিঙ্গারে বাস্তবায়ন করা।
এক্সেল স্প্রিঙ্গারের মালিকানাধীন বিল্ড (Bild) পত্রিকাটি এক সময় ছিল ইউরোপের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। তখন দৈনিক ৫০ লাখের মতো বিক্রি হতো। ২০১২/১৩ সালে বিক্রি এসে নামে অর্ধেকেরও কমে, ২০ লাখে। ছাপা পত্রিকা ও সাময়িকীর কাটতি কমতে থাকায় ২০১৩ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এক্সেল স্প্রিঙ্গারের নিজ হাতে গড়া একাধিক ম্যাগাজিন, আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্র ৯২ কোটি ইউরোতে বিক্রির উদ্যোগ নেন ডফনার।
অন্যদিকে শুরু করেন সংবাদপত্রের ডিজিটালাইজেশনের কাজ। ডফনার স্বপ্ন দেখেছিলেন এক্সেল স্প্রিঙ্গার জার্মানি ছাড়িয়ে বিশ্বের ‘সেরা ডিজিটাল প্রকাশক’ হয়ে উঠবে। আর সেটার অনেকখানিই বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
২০১৪ সালে এক্সেল স্প্রিঙ্গারের আয়ের ৭০ ভাগই আসে ডিজিটাল থেকে। বর্তমানে ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সংবাদপত্র, সাময়িকী ও মাল্টিমিডিয়া কোম্পানি, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিতে কাজ করে ১৫ হাজারের বেশি কর্মী। ২০১৫ সালে কোম্পানির আয় ছিল ৩৩০ বিলিয়ন ইউরো। এক্সেল স্প্রিঙ্গার এখন ইউরোপের সেরা গণমাধ্যম প্রকাশক। গণমাধ্যমে পরিবর্তন, নতুনত্ব আর ডিজিটাল কৌশল গ্রহণের এক অনন্য উদাহরণ এই এক্সেল স্প্রিঙ্গার।
ডফনার যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় অনুপ্রাণিত হয়ে এক্সেল স্প্রিঙ্গার গ্রুপে ‘অনলাইন ফার্স্ট’ স্লোগান যুক্ত করেন। ‘খবর সবার আগে অনলাইনে, তারপর ছাপা পত্রিকায়’
পরিবর্তনকে গ্রহণ করে কীভাবে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে এক্সেল স্প্রিঙ্গার, তা বলার জন্যই লেখার শুরুতে এই দীর্ঘ ভূমিকা। গণমাধ্যম বা প্রেস এবং প্রযুক্তি কোম্পানি অর্থাৎ টেক প্ল্যাটফর্মের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গি। কখনো তারা বন্ধু, কখনো শত্রু। প্রতি সপ্তাহে প্রেস ও প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তন, উদ্ভাবনের খবরগুলো সংক্ষেপিত আকারে থাকবে আমার এ লেখায়। প্রথমেই এক্সেল স্প্রিঙ্গারের উত্তর আমেরিকায় আধিপত্য বিস্তারের খবর।
বিলিয়ন ডলারে পলিটিকো কিনল এক্সেল স্প্রিঙ্গার
রাজনীতি বিষয়ক সাংবাদিকতাকে নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডিজিটাল গণমাধ্যম পলিটিকো কিনে নিচ্ছে জার্মানির এক্সেল স্প্রিঙ্গার। পাশাপাশি পলিটিকোর প্রযুক্তি সংবাদ বিষয়ক পোর্টাল প্রটোকলও কিনছে তারা। দুটি কোম্পানির মালিক ও প্রকাশক ওয়াশিংটন ডিসির মিডিয়া মুঘলখ্যাত রবার্ট অলব্রিটন (Robert Allbritton) এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে কোম্পানি দুটি বিক্রি করছেন। আগে থেকেই পলিটিকোর ইউরোপ অপারেশনের ৫০ ভাগের মালিকানা এক্সেল স্প্রিঙ্গারের থাকলেও এবার তারা উত্তর আমেরিকার পূর্ণাঙ্গ এবং ইউরোপের বাকি অর্ধেকের মালিকানা কিনে গণমাধ্যমটির সর্বেসর্বা হয়ে উঠল।
২০০৬ সালে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের যখন এত প্রচার-প্রসার এবং দাপট ছিল না, ঠিক সে সময়ই রাজনীতি বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা ভেবেছিলেন অলব্রিটন। প্রথমে তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক আরেকটি রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিল’ কেনার কথা চিন্তা করেছিলেন। ‘দ্য হিল’ তখন ৪ কোটি ডলার দাম হেঁকেছিল। পরে অবশ্য নিজেই নতুন একটি সংবাদপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০০৭ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে পলিটিকোর আত্মপ্রকাশ হয়।
পলিটিকো প্রায় ১৪ বছর পর ১০০ কোটি ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর দ্য হিল গত মাসে বিক্রি হয়েছে ১৩ কোটি ডলারে। পলিটিকোর এই সাফল্যের রহস্য কী? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ক উইং নিম্যান ল্যাবের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অলব্রাইট পলিটিকোর আর্থিক সাফল্যের জন্য তার জানাশোনা একটি এয়ারলাইন্সের ব্যবসায়িক মডেল মাথায় নিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি সবার কাছ থেকে অর্থ আয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে অল্প সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে সাবস্ক্রিপশন ফি নেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, কোনো একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাস কিংবা ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট বিক্রি হয় মাত্র ১২ শতাংশ। কিন্তু ওই ১২ শতাংশই এয়ারলাইন্সের আয়ের ৭৫ শতাংশ নিয়ে আসে। সেজন্য তিনি পলিটিকো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন।
২০১০ সালে সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিতে পলিটিকো প্রো চালু করেন অলব্রিটন। এয়ারলাইন্সের মতোই এখানে তার টার্গেট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পয়সাওয়ালা লোকজন। ওয়াশিংটন ডিসির বিভিন্ন লবিস্ট গ্রুপ, ট্রেড গ্রুপ, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদার, ব্যাংক, স্বাস্থ্যসেবার বড় বড় কোম্পানিকে টার্গেট করেন এবং তাদের হাঁড়ির খবর দেওয়া শুরু করেন।
মার্কিন রাজনীতির অলিগলি থেকে শুরু করে বাজেট নিয়ে দর কষাকষি, বিভিন্ন ডিলিং থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সিনেটর বা মন্ত্রীর নৈশভোজের তালিকায় কে কে আছেন, তাও বাদ দিতেন না। দ্রুতই বিশেষ ওই শ্রেণিটির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল পলিটিকো প্রো। এলো ব্যবসায়িক সাফল্য।
২০১৪ সালে এক্সেল স্প্রিঙ্গারের আয়ের ৭০ ভাগই আসে ডিজিটাল থেকে। বর্তমানে ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সংবাদপত্র, সাময়িকী ও মাল্টিমিডিয়া কোম্পানি, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিতে কাজ করে ১৫ হাজারের বেশি কর্মী।
পলিটিকোর উত্তর আমেরিকা অংশে বর্তমানে ৭০০ কর্মী এবং ইউরোপে ৫০০ কর্মী কাজ করেন। তাদের সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করে যাবেন। অলব্রিটন আগের মতোই পলিটিকো ও প্রটোকলের প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অলব্রিটন মনে করেন, পলিটিকোকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। স্প্রিঙ্গারের সিইও মাটিয়াস ডফনারের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম বা প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে সবচেয়ে উঁচুতে ওঠা।
বিটকয়েনে এল সালভাদরের ইতিহাস
মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন অনুমোদন দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে এখন থেকে ডলারের পাশাপাশি বিটকয়েন দিয়েও কেনাকাটা করা যাবে। ইতিমধ্যে মানুষ ম্যাকডোনাল্ডসহ নানা জায়গায় বিটকয়েন দিয়ে পণ্য কেনাকাটা করছে। তবে দেশটির বিরোধী দলসহ বেশিরভাগ মানুষ এর বিরোধিতা করছে। অনেকে বলছেন, এখনো জানেন না কীভাবে বিটকয়েন ব্যবহার করতে হয়।
বিশ্বজুড়ে ভিডিওর জয়জয়কার
ফেসবুকবাসী অর্ধেক সময় কাটায় ভিডিওতে, বন্ধুর স্ট্যাটাস বা ছবি নয়, ফেসবুকে মানুষ অর্ধেক সময় পার করছেন শুধু ভিডিও দেখে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (কিউ-২) অর্থাৎ এপ্রিল, মে ও জুনের আয় ঘোষণা করতে গিয়ে এমনটিই জানালেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকের অন-ডিমান্ড ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়াচ’ খুব দ্রুত মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টাইমলাইনে অন্যান্য কনটেন্টে মানুষ কম সময় ব্যয় করছে। ফেসবুকে এখন মানুষ কিছু বলতে, দেখাতে বা নিজেকে প্রকাশ করতে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ভিডিওকেই বেছে নিচ্ছেন, যোগ করলেন ফেসবুক সিইও।
ইউটিউবের আয় বেড়েছে ৮৩ শতাংশ, গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট জানাল আরও বিস্ফোরক তথ্য। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (কিউ-২) ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের কিউ-২ থেকে এই আয় ৮৩ শতাংশ বেশি। ইউটিউব ইতিমধ্যে পেইড সার্ভিস চালু করেছে এবং আয়ের নতুন নতুন উপায় বের করছে। মোবাইল বা ট্যাব-আইপ্যাডের পাশাপাশি টেলিভিশনে ইউটিউব দেখার হার দ্রুত বাড়ার কারণে ইউটিউবকে ভবিষ্যতের টিভি হিসেবে গণ্য করছেন অনেকে।
অ্যালফাবেটের হিসাবে, এ বছরের জুলাইয়ে ১২ কোটি মানুষ ড্রইংরুমে টিভিতে ইউটিউব দেখেছে। গত বছর প্রতি মাসে এই দেখার হার ছিল ১০ কোটি। তার মানে ২০ কোটি ৯০ লাখ সাবস্ক্রাইবার নিয়ে এগিয়ে থাকা নেটফ্লিক্স এবং ১০ কোটি ৩৬ লাখ সাবস্ক্রাইবার ঝুলিতে থাকা ডিজনির দিকে চোখ রাঙাচ্ছে ইউটিউব।
গুগলের চিফ বিজনেস অফিসার ফিলিপ সিন্ডলারের মতে, টিভিতে ইউটিউব দেখার দর্শক খুব দ্রুত বাড়ছে এবং গুগলের অন্য সব কোম্পানির মধ্যে ইউটিউবই এখন তাদের দ্রুত অগ্রসরমান প্ল্যাটফর্ম। অন্যদিকে ইউটিউব ‘শর্টস’ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। শর্টস প্রথমে ভারতে চালু হলেও এখন সারা বিশ্বে এর ভিউ প্রতিদিন দেড় হাজার কোটি। এ বছরের প্রথম তিন মাস থেকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১ শতাংশের বেশি।
৭৩৪ কোটি মার্কিন ডলার পকেটে পুরেছে নেটফ্লিক্স, পিছিয়ে নেই ভিওডি-জায়ান্ট নেটফ্লিক্সও। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের আয় হয়েছে ৭৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময় (কিউ-২) থেকে তাদের আয় বেড়েছে ১৯.৪ শতাংশ।
ডেইলি মেইল যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় অনলাইন
যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এখন মেইল অনলাইন। তাদের পেছনেই রয়েছে দ্য সান এবং দ্য গার্ডিয়ান। গত জুলাইয়ে মেইলের অনলাইনের পেজ ভিউ ছিল ৫১ কোটি ৮০ লাখ (৫১৮ মিলিয়ন)। একই সময়ে দ্য সানের পেজ ভিউ ছিল সাড়ে ৩৩ কোটি (৩৩৫ মিলিয়ন) আর গার্ডিয়ানের সাড়ে ৩০ কোটি (৩০৫ মিলিয়ন)। এর পরেই আছে মিরর, তাদের পেজ ভিউ ২৪ কোটি ৭০ লাখ (২৪৭ মিলিয়ন)।
পাঠক-শ্রোতা নির্ণয়কারী যুক্তরাজ্যের স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ইপসস আইরিশের (Ipsos Iris) হিসাবে, জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের পাঠকেরা ১৭০ কোটি (১.৭ বিলিয়ন) মিনিট মেইল অনলাইনে খবর পড়ে বা ভিডিও দেখে কাটিয়েছেন। এছাড়া মেইল অনলাইনের ওয়েবসাইট ও অ্যাপে এখন প্রতিদিন ৪১ লাখ (৪.১ মিলিয়ন) পাঠক ভিজিট করেন। মেইলের স্বত্বাধিকারী ডিএমজি মিডিয়ার প্রকাশক মার্টিন ক্লার্কের মতে, খবর, শো-বিজ, খেলাধুলা, অপরাধ, স্বাস্থ্য ও জীবনধারা বিষয়ক খবরের জন্য যুক্তরাজ্যের পাঠকের প্রথম পছন্দ মেইল অনলাইন।
স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়াকে সাসপেন্ড করল ইউটিউব
স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়ার জন্য দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে ইউটিউব। কোভিড-১৯ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগে স্কাই নিউজকে সাত দিনের জন্য সাসপেন্ড করেছে ইউটিউব। এ সময় তারা কোনো ধরনের ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে পারবে না। চ্যানেলটিতে সাবস্ক্রাইবার প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ এবং এই নিষেধাজ্ঞার ফলে স্কাইয়ের চলতি মাসের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মার্কিন রাজনীতির অলিগলি থেকে শুরু করে বাজেট নিয়ে দর কষাকষি, বিভিন্ন ডিলিং থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সিনেটর বা মন্ত্রীর নৈশভোজের তালিকায় কে কে আছেন, তাও বাদ দিতেন না। দ্রুতই বিশেষ ওই শ্রেণিটির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল পলিটিকো প্রো।
দুই বছর আগেও স্কাই নিউজের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ছিল ৭০ হাজার। এখন তা বেড়ে সাড়ে ১৮ লাখে দাঁড়িয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ কিংবা অন্য কোনো স্থানীয় মিডিয়া কোম্পানির মধ্যে স্কাইয়ের সাবস্ক্রাইবারই সবচেয়ে বেশি। চ্যানেলটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও ‘অস্ট্রেলিয়ানস মাস্ট নো দ্য ট্রুথ—দিস ভাইরাস ইজ নট আ প্যানডেমিক’-এর ভিউ ৪৬ লাখ।
ওয়্যারকাটারে ঢুকতেও পয়সা দিতে হবে নিউইয়র্ক টাইমসকে
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পাঁচ বছর আগে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা পণ্য কেনার রিকমেন্ডেশন পোর্টাল ‘ওয়্যারকাটার’ কিনেছিল। এই পোর্টাল থেকে গত কয়েক বছরে প্রচুর অর্থ এসেছে। এবার ওয়্যারকাটার থেকে আরেক দফা আয় করার চিন্তা করছে পত্রিকাটি। এ জন্য তারা নিউইয়র্ক টাইমসের মিটারড পে-ওয়ালে ওয়্যারকাটারকে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। কুকিং এবং গেমসের মতো ওয়্যারকাটারও হবে টাইমসের আরেকটি স্ট্যান্ডএলোন পোর্টাল। মাসে ৫ ডলার এবং বছরে ৪০ ডলার সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে পড়া যাবে সব আর্টিকেল। তবে ১০টি আর্টিকেল ফ্রি পড়তে পারবেন পাঠক, এর বেশি হলেই গুনতে হবে অর্থ।
গেজেট রিভিউ পোর্টাল গিজমোর এডিটর ইন চিফ ব্রায়ান লেম ২০১১ সালে ওয়্যারকাটার প্রতিষ্ঠা করেন। লেম সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, আইফোনের নতুন কোনো ভার্সনের ঘোষণা আসার চার মাস আগে ফোনটি লেমের হাতে যায়। টাইমস ২০১৬ সালে ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) ডলারে ওয়্যারকাটার কিনে নেয়। ওই সময় ওয়্যারকাটারের পেজ ভিউ ছিল প্রায় ৫০ লাখ এবং বছরে এই পোর্টালের মাধ্যমে ১৫ কোটি ডলার ই-কমার্স ট্রান্সজেকশন হতো।
নিউইয়র্ক টাইমস পোর্টালটি কেনার পর প্রতি কোয়ার্টারে ওয়্যারকাটারের আয় বেড়েছে। ২০১৮ সালে এই সাইট থেকে টাইমস আয় করেছে ২ কোটি ডলার। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে কয়েক গুণ। এটিই এখন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অ্যাফিলিয়েট বা পণ্য কেনার রিকমেন্ডেশন সাইট।
পোল্যান্ডের গেজেটা ভিবর্চার অভাবনীয় সাফল্য
মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে মানুষ অনলাইনে খবর পড়ে বিনামূল্যে। সেখানে অর্থ দিয়ে অনলাইনে খবর পড়ার অভ্যাস এখনো গড়ে ওঠেনি। দেশটিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংবাদপত্র বিলির প্রথাও নেই। এই যখন দেশটির সংবাদপত্র ও পাঠকের সংস্কৃতি, সেখানে ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে দেশটির সংবাদপত্র গেজেটা ভিবর্চা (Gazeta Wyborcza)। সংবাদপত্রটি ইতিমধ্যে আড়াই লাখ ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার তৈরি করেছে।
পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় পত্রিকা গেজেটা ভিবর্চা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পত্রিকাটির নামের ইংরেজি অর্থ করলে দাঁড়ায় ইলেক্টোরাল গেজেট। দেশটির ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) মানুষ বর্তমানে পত্রিকাটি কোনো না কোনোভাবে পড়েন এবং এর ৩০টি স্থানীয় সংস্করণ রয়েছে। ২০১৪ সালে পত্রিকাটি পরীক্ষামূলক ভাবে হাইব্রিড পে-ওয়াল চালু করে। এর মাধ্যমে পাঠক অর্থ দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাড়া এবং বিনামূল্যে বিজ্ঞাপনসহ পত্রিকাটি পড়তে পারেন।
পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ফোর্বস
বিশ্বের শীর্ষ ধনী, শীর্ষ ধনী তারকা, শীর্ষ কোম্পানি, শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি, শীর্ষ ধনকুবেরদের তালিকার জন্য সুপরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন ফোর্বস সম্প্রতি নতুন চমক সৃষ্টি করেছে। সাময়িকীটি তাদের অনলাইন ভার্সনে আলাদা স্টোর তৈরি করে ব্র্যান্ডের পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ বিক্রি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তারা পোশাকের ব্র্যান্ড বয়েজ লাইয়ের (Boys Lie) পার্টনারশিপের মাধ্যমে ফোর্বস ব্র্যান্ডের শর্টস, হুডি, টি-শার্ট, ক্যাপ, ব্যাগ ও শিশুদের কয়েকটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে।
যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এখন মেইল অনলাইন। তাদের পেছনেই রয়েছে দ্য সান এবং দ্য গার্ডিয়ান। গত জুলাইয়ে মেইলের অনলাইনের পেজ ভিউ ছিল ৫১ কোটি ৮০ লাখ (৫১৮ মিলিয়ন)।
২০২০ সালের গোড়া থেকে মিডিয়া কোম্পানিগুলো ই-কমার্স ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছে। ইতিমধ্যে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ইকোনোমিস্টের প্রতিষ্ঠিত অনলাইন স্টোর রয়েছে। অন্যদিকে বাজফিড, গ্রুপ নাইন এবং কনডে নেস্ট ই-কমার্স সম্প্রসারণ করতে কাজ শুরু করেছে। ইউরোপের পাবলিশাররাও একই পথে হাঁটছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় মানহানিকর ফেসবুক মন্তব্যের জন্য দায়ী প্রকাশক
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে এনেছেন দেশটির হাইকোর্ট। সম্প্রতি এক রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে কেউ মানহানিকর মন্তব্য করলে তার দায়ও নিতে হবে গণমাধ্যমকেই। আদালতের এই নির্দেশ মানতে হলে চড়া মূল্য দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে, অন্যথায় কমেন্ট সেকশন একেবারে বন্ধ রাখতে হবে।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ রায় এলো তার সূত্রপাত কয়েক বছর আগে। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ‘ফোর কর্নারস’ নামে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। সেখানে দেখানো হয়, দেশটির একটি কিশোর সংশোধনাগারে আটককৃতদের ওপর কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়।
অনুষ্ঠানে একটি ছবিতে দেখানো হয় ডিলান ভলার (Dylan Voller) নামে একজনকে হাত-পা বেঁধে মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে একটি চেয়ারে আটকে রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এই ছবিটি গুয়ানতানামো বে কিংবা আবু গারাইব কারাগারের নয়। খোদ অস্ট্রেলিয়াতেই ২০১৫ সালে এ ঘটনা ঘটেছে। তারা একে ‘অস্ট্রেলিয়ার লজ্জা’ নামেও অভিহিত করে। এ নিয়ে তখন শোরগোল পড়ে যায় এবং একাধিক গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন হয় এবং সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ারও হয়।
ডিলান ভলারের খবরগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারের পর অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেন। এর মধ্যে কয়েকটি মন্তব্য ছিল এমন, ভলার একজন ধর্ষক। তিনি খ্রিস্টানদের উপাসনালয় গির্জা এবং আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা স্যালভেশন আর্মির একজন কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন এবং তার হামলায় ওই কর্মকর্তা এক চোখ হারিয়েছেন।
ভলার এই মন্তব্যগুলো মেনে নিতে পারেননি। এর সূত্র ধরে তিনি মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে নয়, মামলা ঠুকে দেন দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, দ্য অস্ট্রেলিয়ান এবং স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ভলার বলেছেন, গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে যে প্রতিবেদনগুলো করা হয়েছে সেগুলো ঠিক আছে, তবে গণমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে আসা কিছু মন্তব্য তার জন্য মানহানিকর। সে জন্য তিনি প্রতিকার চেয়ে মামলা করেছেন। এ নিয়ে তখন উভয়পক্ষ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তাদেরকে সাংবাদিকতা এবং এক্ষেত্রে কোনো ভুল-ভ্রান্তি হলে তার জন্য দায়ী করা যেতে পারে। এছাড়া তাদের ওয়েবসাইটেও যদি কোনো মানহানিকর মন্তব্য প্রকাশ হয়, সেটার জন্যও তর্কের খাতিরে বললে হয়তো দায়ভার চাপানো যেতে পারে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় করা মন্তব্যের জন্য দায়ী শুধু মন্তব্যকারীই, গণমাধ্যম নয়। কিন্তু আদালত তাদের যুক্তি আমলে নেননি, পাঠকের মন্তব্যের দায়ভার চাপিয়ে দেন গণমাধ্যমের উপর।
অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি অনলাইনের বিভিন্ন নিয়মকানুন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিশ্বের মঞ্চ হয়ে উঠছে বলে অনেক বিশ্লেষক বলছেন। এ বছরের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলীয় সরকার এক নির্দেশনায় বলে, ফেসবুকসহ টেক প্ল্যাটফর্মে তাদের দেশের কোনো গণমাধ্যমের খবর শেয়ার হলে মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে অর্থ দিতে হবে। তখন ফেসবুক এ নির্দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ড থেকে ফেসবুকে কোনো খবর শেয়ার করা বন্ধ করে দেয়। এরপর সরকারের সুর নরম হয় এবং ওই নির্দেশনা থেকে সরে আসে অস্ট্রেলিয়া। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের পর কী হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা যায়, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সাবস্ক্রাইবার (সক্রিয় সিম) ১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের সক্রিয় সিম ব্যবহার রয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার, রবির ৫ কোটি ১৫ লাখ ১ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৯ হাজার। বায়োমেট্রিক মাধ্যমে পরীক্ষিত সিম দিয়ে সর্বশেষ ৯০ দিনে সর্বনিম্ন একবার কথা বলা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা অথবা এসএমএস পাঠানো হয়েছে এমন সিমকেই সাবস্ক্রাইবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে জুলাই পর্যন্ত দেখা গেছে, বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেটের সাবস্ক্রাইবার ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হজার, আইএসপি ও পিএসটিএনের ১ কোটি ৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার হলেও যারা এই মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন, তাদের সাবস্ক্রাইবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফকরউদ্দীন জুয়েল ।। সাংবাদিক
[email protected]