গ্রেনেড হামলা : ২১ শতকের মাৎস্যন্যায় ও রাজনীতির ভূত-ভবিষ্যৎ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এদেশের রাজনীতিতে এক নারকীয় বর্বরতম শনিবার! বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন, সপ্তম-অষ্টম শতকের ‘মাৎস্যন্যায়’ এর কথাই যেনো স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘যেখানে জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে আবর্তিত হয় এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
অবশ্য মানুষ হিসেবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মাছেদের রাজ্যে কতিপয় বড় মাছ কর্তৃক সাবাড় হয় অসংখ্য ছোট ছোট মাছ। যেখানে দুর্বলেরা এক লহমায় হয়ে যায় সবলের গ্রাস। মাছের রাজ্যে এটি নিয়ম হলেও মানবসমাজে তা ঘোরতর অন্যায় ও বর্বরতা হিসেবে পরিগণিত হয়।
আরও পড়ুন : একুশে আগস্ট : রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিকল্পিত দুর্বৃত্তায়ন
মহামতি শেক্সপিয়রের ভাষায়, ‘A Jew's Blood is also red’। তার সূত্র ধরে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক বা যেকেনো মতাদর্শেরই হোক, আইন বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
আমরা একটু সচেতনভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিবর্তন পরিক্রমা যদি গুরুত্ব সহকারে তলিয়ে দেখার চেষ্টা করি তাহলে যে বিষয়টি দিবালোকের মতো স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেবে যে, এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বসাকুল্যে দুটি পক্ষ রয়েছে—
এক. মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগপন্থী স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি;
দুই. পরাজিত পাকিস্তানের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগবিরোধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের যৌথ জগাখিচুড়ি ঘরানার অনাদর্শিক শুধুমাত্র ক্ষমতাচর্চার প্লাটফর্ম বিএনপি-জামায়াত জোট বা হাল আমলের ঐক্যফ্রন্ট।
আরও পড়ুন : সম্প্রীতি কোথায়?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্ন মতকে দমন করার পাশাপাশি দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার মতো মধ্যযুগীয় বর্বর অপকৌশলের প্রবর্তন শুরু করে মুশতাক-জিয়া গং দখলকৃত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। বীর বাঙালির কাছে পরাজিত হানাদার পাকিস্তানি আশির্বাদপুষ্ট জিয়া ছিলেন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ‘আই এস আই’ এর একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কৌশলী।
১৯৬৫ সালে সে ‘আই এস আই’ এর হয়ে বিশেষ অবদান রাখায় স্বৈরাচার আইয়ুব খান সরকার জিয়াকে ‘সিতারা-ই-জুলফিকার’ পুরস্কারে ভূষিত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের গেরিলাযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি বিরচির ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ন’ বইতে তিনি উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধের একদম শুরুর দিকে মেজর জিয়া মূলত পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের অস্ত্র খালাসের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছিল, অস্ত্রখালাসে বাধাগ্রস্ত হয়ে সে স্থানীয় বাঙালি জনগণের উপর গুলি ছুড়ে বাঙালি হত্যা, হতাহতের ঘটনাও ঘটান তিনি।
আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন
পরবর্তীতে পাকিস্তানি হানাদারদের স্বার্থ নিশ্চিত করতেই কৌশলে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশ করেন এবং সে তার অধস্তন মুক্তিবাহিনীর সদস্যদেরকে অরক্ষিত রেখে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে। প্রকাশ্যে চলে আসা তদানিন্তন আই এস আই প্রধান কর্তৃক জিয়ার প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করে লেখা চিঠিতেও মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অনুপ্রবেশের বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছে।
এছাড়া, বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা ‘বিএনপি-সময় অসময়’ বইতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ‘জিয়া বাংলা লিখতে বা পড়তে জানতেন না।
তিনি শুধু ইংরেজি ও উর্দু মিশ্রিত শব্দ দিয়ে বাংলায় কথা বলতে পারতেন। তবে কোনো অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে দেশের সহজ সরল জনগণকে বোকা বানানোর জন্য সে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা দ্বারা উর্দু ও ইংরেজি হরফে লেখা বাংলা বক্তব্য পাঠ করতেন। আর বক্তব্য প্রদানকালে নিজেকে কুলীন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে জাহির করার জন্য এলোমেলোভাবে হাত ছোড়াছুড়ি করতেন ও অত্যধিক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতেন।
আরও পড়ুন : একুশে আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট
তার এমন সামরিক আচরণ সাধারণ জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনায় তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা বনে যাওয়া এদেশের কতিপয় বুদ্ধিব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি ও সামরিক সংস্কৃতির ধারকবাহক জিয়াকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করার পরিকল্পনায় গ্রামে গ্রামে হেঁটে মানুষের সঙ্গে সালাম বিনিময়, খাল কাটার নামে ফটোশ্যুট কর্মসূচি প্রবর্তন করে।
যা সাধারণ মানুষের কিছু অংশের মাঝে জিয়ার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ভিন্নমতকে বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকেই তারা একমাত্র প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধ মতাদর্শের জনমত তৈরির জন্য জনগণের ট্যাক্সের রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে জিয়াউর রহমান।
আরও পড়ুন : অসাম্প্রদায়িক মানবিক বঙ্গবন্ধু
তার আগেই সে তার সাংস্কৃতিক আদর্শ পাকিস্তানের সার্বিক নির্দেশনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কুশিলব হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রশিদ ও জেলহত্যা বাস্তবায়নে নেতৃত্বদাতা রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন তার ফাঁসির রায় কার্যকরের পূর্বে প্রদানকৃত জবানবন্দিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথা স্পষ্টভাবে স্বীকার করে।
ইতিহাসের বর্বরতম অধ্যায় ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর ভোরবেলায় ভাগ্যবিধাতার অশেষ কৃপায় উচ্চশিক্ষালাভে সে সময় জার্মানিতে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান এদেশ তথা মানবতার চিরশত্রুদের বুলেটের আঘাত থেকে।
পাকিস্তানি ভাবাদর্শ দ্বারা পরিচালিত জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাকিস্তানি কায়দায় নামকরণ করা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিকামী বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও লাখো মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করতে জিয়াউর রহমানের ঘৃণ্য পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাল সবুজের পতাকার রংকেও ফ্যাকাশে করে দেয় সে, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে নামকরণ করে ‘রেডিও বাংলাদেশ’।
আরও পড়ুন : ধর্মের রাজনীতি নাকি রাজনীতির ধর্ম
অবৈধভাবে সামরিক শাসন ও দেশের সর্বময় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার হীনউদ্দেশ্যে অসংখ্য প্রতিবাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক বাহিনীর সদস্যকে কোর্টমার্শালের নাটক মঞ্চস্থ করে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে অবৈধ স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। জিয়ার হাতে খুনের শিকার সেইসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের স্বজনেরা আজও তাদের স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মরহুম মওদুদ আহমেদ রচিত ‘Democracy and A challenge of Development’ বইতে উল্লেখ করেন যে, ‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সেনানিবাসে সকল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সামরিক অফিসারদের আশ্রয়স্থল ছিল জিয়াউর রহমান নিজেই। সমকালীন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর মধ্যে তাকে (জিয়া) ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র।’
১৯৮১ সালে সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহীদের হাতে করুণভাবে জিয়ার জীবনের ইতি ঘটলে সেকালে দেশের অল্পশিক্ষিত রাজনৈতিকভাবে অসচেতন জনগণের সহজ-সরল আবেগকে পুঁজি করে ক্ষমতার মসনদে আসীন হয় জিয়ার স্ত্রী ৮ম শ্রেণি পাস রাজনৈতিকভাবে অদক্ষই নয় অযোগ্যও বটে, সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া বেগম খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন : তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ?
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিন্তায় পশ্চাৎপদ খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জিয়ানীতিতেই আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির উপর নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রাখলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণ ভোটের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে।
জিয়াউর রহমানের মজ্জাগত সামরিক, পাকিস্তানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি, পাকিস্তানঘেঁষা সাংস্কৃতিক চেতনা এবং খালেদার অসভ্য পশ্চাৎপদ চিন্তার ধারক তারেক জিয়া তার মাতা-পিতা কর্তৃক বাঙালিকে জাতীয়ভাবে বিভাজনের লক্ষ্যে পাকিস্তানপন্থী ও বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী উগ্রসাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষকে এককভাবে চিরস্থায়ী করার মিশন হিসেবে প্রগতিশীল কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে খুন করে সরিয়ে দেওয়ার অপরাজনীতি শুরু করে সেসময়।
যার বলি হিসেবে প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রখ্যাত বাঙালি বুদ্ধিজীবী দার্শনিক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল্লাহ মাস্টারসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে।
আরও পড়ুন : তরণী চলছে শুভ লক্ষ্যে
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে পঙ্গু করে দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের দিন রমনা বটমূলে বোমা হামলা, সারাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের উত্থান, দেশব্যাপী ৬৩ জেলার প্রায় সাড়ে চারশ'র বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা, বাংলা চলচ্চিত্রকে ধ্বংসের লক্ষ্যে ক্ষেপাটে নগ্নতা, কাটপিসের অবাধ প্রচলন ও দেশের সিনেমা হলগুলোতে বোমা হামলার মতো ভয়াবহ নারকীয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এ জাতিকে।
সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ও খুনি জিয়ার বড় ছেলে মিস্টার ১০ পার্সেন্ট ও খাম্বাজিয়া হিসেবে খ্যাত তারেক রহমানের ঘৃণ্য হাওয়া ভবন পরিকল্পনার নিষ্ঠুরতম বাস্তবায়ন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তারেক জিয়া ও বাবরের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মুহুর্মুহু সামরিক গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হরকাতুল জেহাদ জঙ্গিসংগঠনের সদস্যরা, পরবর্তীতে এ হামলা বাস্তবায়নকারী মুফতি হান্নানের জবানবন্দি ও জজমিয়ার জমানবন্দিতে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কুৎসিত খুনি চেহারা ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন : আমি তোমাদেরই লোক
এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে সেদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জীবনবাজী রেখে মানববর্ম তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে প্রাণে বাঁচাতে সক্ষম হলেও সেদিন গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মহাসড়ক প্লাবিত হয় অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর তাজা রক্তে, গ্রেনেডের আঘাতে শহীদ হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২০ জনের অধিক নেতৃবৃন্দ। আর বিএনপি-জামায়াত দ্বারা কুক্ষিগত রাষ্ট্রযন্ত্র সেদিন তার জনগণের ঘাতক হিসেবে আবির্ভূত হয়।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্ত কার্যক্রমকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে তারেক-বাবর নিয়ন্ত্রিত পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় বিকৃত লোক ঘটনাস্থলের সব আলামত ধ্বংস করে দেয় ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর রক্তপ্লাবিত সড়ক। কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় শোকাভিভূত, বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগবিরোধী তথা স্বাধীনিতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থী শক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার যে সুদূরপ্রসারী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই বাঙালির জাতীয় ও সাংস্কৃতিক ঐক্য সমুন্নত রেখে আলোকিত সমৃদ্ধ আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হলে এই নষ্ট, ক্ষমতালিপ্সু বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে স্বাধীনতার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন : ফিরে এলেন দুঃসাহসী নাবিক
অন্যথায় বাঙালির চিরশত্রুরা সহজ-সরল জনগণের আবেগকে পুঁজি করে পূর্বের ন্যায় আবার মাৎস্যন্যায় কায়েম করবে বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া প্রভৃতি দেশের মতো ব্যর্থ, দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও উগ্রজঙ্গিবাদের আঁতুরঘরে পরিণত করবে।
বিশ্বরাজনীতির প্রবাদপুরুষ, রাজনীতির কবি ও দার্শনিক হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত বিশ্ববন্ধু, বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়, ‘একটি জাতির সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ব্যতিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন।’
তাই অমিত সম্ভাবনা ও শক্তির আধার তরুণ প্রজন্মের প্রতি আবহমান বাঙালির হাজার বছরের প্রাচুর্যময় সংস্কৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি চর্চা করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। অন্যথায় আমরা জাতি হিসেবে শেকড়বিহীন বনসাই-এ পরিণত হব।
ক্রমবিকাশমান সভ্যতার স্রোতে চিরতরে হারিয়ে যাবে বাঙালির কালজয়ী গৌরবগাঁথা। আসুন আমরা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি, সুদীর্ঘ স্বাধীকার সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন হই এবং তার ক্রমবিকাশকে শক্তিশালীভাবে সংরক্ষণ করতে অংশগ্রহণমূলক অনুশীলনে মনোনিবেশ করি।
লেখক : ইয়াসির আরাফাত (তূর্য) ।। সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জেডএস