ফিলিস্তিনে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত : একটি বিশ্লেষণ
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (PA) সম্প্রতি আল জাজিরার অফিস বন্ধ এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক-সাংবাদিক ও স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মিডিয়ার প্রতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আচরণের দ্বৈততা
সমালোচকরা এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মিডিয়ার প্রতি দ্বৈত আচরণের প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছেন। আল জাজিরা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি সংগ্রামকে তুলে ধরতে এবং দখলদারদের নৃশংসতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
আল জাজিরা সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে কভার করেছে। তারা নিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবিক প্রতিক্রিয়া ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত তথ্যমূলক ব্ল্যাকআউট তুলে ধরেছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেছে, আল জাজিরা ‘প্যালেস্টাইনে প্রচলিত আইন ও প্রবিধান’ লঙ্ঘন করেছে এবং ‘বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে।
সরকারি ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত ‘বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি এমন সময়ে হয়েছে যখন দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী আল জাজিরার রামাল্লার অফিস ৪৫ দিনের জন্য বন্ধ করার সামরিক আদেশ দেয় এবং পূর্ব জেরুজালেমেও চ্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত করে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং লেখক-সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই কঠোর। ইয়াসির আল-জাতারাহ এই সিদ্ধান্তকে ‘দখলদারিত্বের পদাঙ্ক অনুসরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতাহ সাম্রাজ্য দখলদারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে।’ তিনি একে আল জাজিরার প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর অপরাধ হিসেবে দেখেন। ইব্রাহিম হামামি সিদ্ধান্তটিকে ‘কর্তৃপক্ষের নিপীড়নমূলক আচরণ’ হিসেবে বর্ণনা করে এটি দখলদারদের কার্যক্রমের মতো বলেও মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনি নেতাদেরও কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় উদ্যোগ’-এর মহাসচিব মুস্তাফা বারঘৌতি এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ বলেছেন। তিনি আল জাজিরার দখলদারিত্বের অপরাধ প্রকাশ এবং ফিলিস্তিনি সংগ্রামের কভারেজের প্রশংসা করেছেন। ‘ওয়াতান’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নিজাম আল-মাহদাউই বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত শোকাহত ফিলিস্তিনি মায়েদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার প্রয়াস।
হামাসের প্রতিক্রিয়া:
হামাস এই সিদ্ধান্তকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বরকে নীরব করার প্রচেষ্টা হিসেবে নিন্দা করেছে। তারা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
আল জাজিরার প্রতিক্রিয়া:
আল জাজিরা নেটওয়ার্ক পশ্চিম তীরে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ দখলদারিত্বের অপরাধ ঢাকার জন্য সাংবাদিকদের নিরুৎসাহিত করার প্রচেষ্টা। তারা আরও জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের ভীতি প্রদর্শন এবং তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত করার একটি চলমান প্রচারণার অংশ।
নেটওয়ার্কটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য দায়ী করেছে এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
আল জাজিরার অফিস বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মিডিয়ার স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দখলদারিত্বের নৃশংসতার প্রতিবেদন তৈরি করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামকে তুলে ধরতে আল জাজিরার ভূমিকা অমূল্য। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।