প্রসঙ্গ ১/১১ : সংকটে-সংগ্রামে গণমানুষের আস্থা যখন শেখ হাসিনা
স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করে এই পবিত্র ভূমির সংগ্রামী জনগণকে আবারও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি করা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আবারও অন্ধকারে ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র ওদের অনেক দিনের।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে এসে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশে আবার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। সেই দিন থেকেই ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেটে পরিণত হন গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য ভয়ংকর একটি চ্যালেঞ্জের দিন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় সেইদিন আজকের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলার হীন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায় এদেশের আপামর জনগণের প্রতিবাদী ভালোবাসার কাছে। আর এই জন্যই দিনটি স্মরণীয়।
আরও পড়ুন >>> বীরের জাতি বাঙালি
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে এই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যার নীল নকশা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। তাই ইতিহাসের এই কালো দিনটি মুজিবাদর্শের নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রকামী দেশের আপামর জনগণ ‘গণতন্ত্র অবরুদ্ধ দিবস’ হিসেবে পালন করে।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ধানমন্ডির নিজ বাসভবন সুধা সদন থেকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের জন্য সুধা সদনের চারদিক বিভিন্ন বাহিনীর দুই সহস্রাধিক সদস্য ঘিরে রেখেছিল।
জননেত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সাদা শাড়ি পরিহিতা শেখ হাসিনা যৌথবাহিনীর কাছে জানতে চান, কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? দেশে কী সামরিক শাসন জারি হয়েছে? কোনো উত্তর ছিল না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেদের মুখে।
গ্রেপ্তারের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নামে দেওয়া হয় একাধিক মামলা। বাসা থেকে তাকে পুলিশের একটি জিপে করে ঢাকার সিএমএম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত এলাকায় তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশবাহিনীর দায়িত্বহীনতার কারণে তিনি নাজেহালের শিকার হন। সেইদিন সিএমএম কোর্টে দাঁড়িয়ে বাঙালির আস্থা ও ভালোবাসার ঠিকানা শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আইনি ভাষায় ৩৬ মিনিট বক্তব্য রাখেন।
সেই সকালেই অগণিত রাজনৈতিক কর্মী নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে কোর্টপ্রাঙ্গণে ছুটে গিয়েছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে। আদালতে শেখ হাসিনার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে। এরপর শেখ হাসিনাকে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত কয়েকটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ওইসব মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
গ্রেপ্তারের পরই বঙ্গবন্ধুকন্যার মুক্তির দাবিতে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হলে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তাকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করানোর দাবি জানান। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে কারাবন্দি শেখ হাসিনাকে ২০০৮ সালের ১১ জুন আট সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সেইখানে তিনি কান ও চোখের চিকিৎসা নেন। দেশে ফেরার পর আবার তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।
কারাবরণের পর প্রায় এক বছর বন্দি ছিলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা, অবরুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র। তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যানারে পদদলিত হয়েছিল ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। তবে ১/১১-এর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের দেওয়া মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করলেও পরবর্তীতে সেই অভিযোগ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অব্যাহতি পান বঙ্গবন্ধু কন্যা। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়, মুক্তির মিছিলে শামিল হয় নেতাকর্মীরা। মুক্ত হয় অবরুদ্ধ গণতন্ত্র।
আরও পড়ুন >>> তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ?
গ্রেপ্তারের পর শেখ হাসিনাকে রাখা হয়েছিল জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে। সেইখানে খাবারে ক্রমাগত পয়জন মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলার টার্গেট করা হয়। স্লো পয়জনিংয়ের কারণে বন্দি শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সবই ছিল তাকে এদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জঘন্য ষড়যন্ত্র।
এজন্য ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর তার দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন বীরদর্পে। উদ্দীপিত আর অনুপ্রাণিত হয় আওয়ামী লীগের লক্ষ কোটি নেতাকর্মী। যৌথবাহিনী তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করার পর গণমানুষ তার অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা বহুগুণে বেড়ে যায় দেশের মানুষের কাছে।
সেই সময় শেখ হাসিনার সাব-জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেপ্তারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎকণ্ঠা বদলে দিয়েছিল রাজনৈতিক দৃশ্যপট। কারণ তখন আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। যা কেবল বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই সম্ভব হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। চিঠিটি নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করে। উজ্জীবিত হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি দেশবাসীর প্রতি তার আস্থার কথা জানিয়েছিলেন। গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হওয়ায় দুঃসময়ে নেতাকর্মীরা কী করবেন তার নির্দেশনা ছিল ঐ চিঠিতে। চিঠিটি হুবহু এই রকম—
প্রিয় দেশবাসী,
আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের ওপর আমার ভরসা।
আরও পড়ুন >>> ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত : ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের ইতিহাস
আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনো মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবোই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
শেখ হাসিনা, ১৬.০৭.২০০৭
শেখ হাসিনার লিখে যাওয়া এই আবেগময় চিঠি তার মুক্তি আন্দোলন তরান্বিত করে। সৃষ্টি করে জনমত। চিঠির একটি লাইন যেন অনবদ্য বিদ্রোহী কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে বাজতে থাকে লক্ষকোটি নেতাকর্মীদের কানে।
অনুপ্রেরণামূলক এই চিঠিতে শেখ হাসিনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে তার নেতৃত্বের একনিষ্ঠতা তখন সত্য হয়ে উঠেছিল শব্দমালার গাঁথুনিতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজির। অথচ ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতাকালে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হলেও কখনো চাঁদাবাজির মামলা করা হয়নি। ভাবতে অবাক লাগে মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও কয়েকগুণ বেশি কূটকৌশলী ও ষড়যন্ত্রকারীরা ভর করেছিল ঐ সামরিক সরকারের চারপাশে।
ভাবতে কষ্ট হয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার জন্য জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছিলেন শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছে ৬৮ জন। সেই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।
যে নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। চারদলীয় জোটের ভোট কারচুপির নীল নকশা প্রতিহত করার জন্যই আন্দোলন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করাও তার মূল টার্গেট ছিল। মূলত শেখ হাসিনার এই চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে যাদের অবস্থান ছিল, তার নেতৃত্ব যাদের কাছে আতঙ্ক ছিল তাদের কারণেই সেইদিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এটাই ছিল তার অপরাধ। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন—‘আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সেই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে। পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কি না, পায় নাই। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।’
অনেকেই বলেন মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে নেমেছিল ১/১১ সরকার। কিন্তু বাস্তবে কী দেখতে পেয়েছি আমরা? মামলা-হয়রানির শিকার বেশি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট মাইনাস টু নয় ‘মাইনাস শেখ হাসিনা’—তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রত্যাশা ছিল শাসকগোষ্ঠীর।
আরও পড়ুন >>> বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন
এইতো সেইদিনের কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সুদখোর, কালোটাকার মালিকরা টাকা সাদা করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছিল নতুন দল গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার। আর সরকারের পক্ষ থেকে ঐ দলে যোগ দেওয়ার জন্য নানা রকমের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষনেতাদেরও। আর রাজি না হলে দুদক’কে দিয়ে রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে বিতর্কিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সরকার, একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হচ্ছিল।
ষড়যন্ত্র সফল না হলেও পরবর্তী যেন তারা দলে বিতর্কিত হয় তারও ছক তৈরি করেছিলেন তারা। পরবর্তীতে দূরদর্শী রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনা দুঃসময়ের বাস্তবতা বুঝতে পেরে তাদের আবার কাছে টেনে নেন।
চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ৯টি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৬টি মোট ১৫টি মামলা করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তার ভাবমূর্তি, বঙ্গবন্ধু পরিবারে ঐতিহ্য নষ্ট করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে এবং তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে ‘দুদক’কে ব্যবহার করে।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠান নাইকোকে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ ৭জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে ‘দুদক’। ২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করলে ৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত মামলাটি বাতিল ঘোষণা করেন। এইভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা সব মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছিল বলেই তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো উদঘাটিত হয়নি। এজন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিধিমালার অসংগতি দূর করতে তা সংশোধনেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এই প্রজন্মের নেতাকর্মীরা ৭৫ রাজনৈতিক বীভৎসতা দেখিনি। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের ইতিহাসের নাটকীয়তা দেখেছি। দেখেছি রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন করতে, দুদকের দৌড়ঝাঁপ। ‘মাইনাস টু’র নামে শুধুমাত্র শেখ হাসিনামুক্ত রাজনীতি করতে তাদের উচ্চস্বর ও দাম্ভিকতা। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের অসহায়ত্ব আর প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য জনগণের মমত্ববোধ আর ভালোবাসা।
আরও পড়ুন >>> প্যারী মোহন আদিত্য : অল্পশ্রুত মহান দেশপ্রেমিকের প্রতিকৃতি
আজকে অনেক নেতা হয়তো সেই দিনের ভূমিকা নিয়ে অনেক কথা বলবেন কিন্তু আমি মনে করি শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সেই আবেগময় চিঠিই তার মুক্তির জন্য উজ্জীবিত করেছিল নেতাকর্মীদের। শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, দলের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা ভুল করতে পারেন, সিদ্ধান্ত নিতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী কখনো ভুল করেন না।
চিঠিতে দেশের মানুষের ওপর ভরসা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। দেশের মানুষ তার প্রতিদান দিয়েছেন ২০০৮ সালে তাকে দেশ সেবার সুযোগ করে দিয়ে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর ও দেশবাসীর ওপর জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থার কারণেই শেখ হাসিনাকে আটকে রাখা যায়নি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
শেখ হাসিনা সেইদিন চিঠিতে বলেছিলেন, সত্যের জয় হবেই। সেই জয়ের কারণেই ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্ত হওয়ার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার ভালোবাসার প্রতিদান একবার নয়, পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনে দিয়েছেন।
ভালোবাসার প্রতিদান শুধু ভালোবাসাতেই হয়, অন্যকিছুতে নয়। শুধু উন্নয়ন অগ্রগতি নয়, সাধারণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন, সামাজিক বেষ্টনীর মাধ্যমে বিশেষ করে বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, করোনাকালীন প্রণোদনা, অসহায় মানুষকে গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কল্যাণে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণ আর তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনার এই ভালোবাসার সেতুবন্ধন যেন কারও ব্যক্তিগত খায়েস আর কারও লোভের আগুনে পুড়ে ছাই না হয়, সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এতদিন ঘাপটি মেরে থাকা ১/১১ কুশীলবগণ আর স্বাধীনতা বিরোধীচক্র আবারো নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীদের সতর্ক থাকতে হবে। এই দেশে আর যেন ১৫ আগস্ট কিংবা ১৬ জুলাই ফিরে না আসে। ব্যক্তি চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশার চেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপদ রাখতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যার ওপরেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ও আস্থা বঙ্গবন্ধু কন্যার।
মানিক লাল ঘোষ ।। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য