কামরুল ইসলাম চৌধুরী : পরিবেশ সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
অনুজপ্রতিম সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। একজন অর্থনীতি ও পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক। ২ মে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩।
১৯৬০ সালের ৩০ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে তার জন্ম। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। লিভার সিরোসিসে তার মৃত্যু হয়।
তার পেশাদারিত্ব তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। বলাবাহুল্য কিছু সাধারণ গুণাবলী তার রয়েছে, যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। দৈনিক সংবাদে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। সেই সাথে তিনি অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ সাংবাদিক হিসেবে আবির্ভূত হন।
আরও পড়ুন >>> সাংবাদিক যখন নির্যাতনের শিকার
তিনি ফোরাম অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টস (এফইজেবি) এর সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে ও বিদেশে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
আগামী প্রজন্মের সাংবাদিকদের কামরুল ইসলাম চৌধুরী সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাসস-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাংবাদিক হিসেবে জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কামরুল ইসলাম চৌধুরীর অবদান দেশে ও বিদেশে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের তৃণমূলে যখন মানবাধিকার আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত তখন থেকে পরিবেশ সাংবাদিকতার উন্মেষ ঘটতে শুরু করে।
১৯৬০ এর দশকে যে আধুনিক পরিবেশ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার ইতিহাস দীর্ঘ। এই সময়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা ছিল এবং সাংবাদিকরা পরিবেশগত সমস্যা, জনস্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসইয়ের জন্য তাদের প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদন করতে শুরু করেন।
পরিবেশ সাংবাদিকতার ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১৯৬২ সালে র্যাচেল কারসন বই ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ প্রকাশ করা। বইটি কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো উন্মোচিত করে এবং এর প্রকাশনার ফলে সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন >>> বায়াস, বুলশিট, লাই : আস্থার সংকটে সংবাদমাধ্যম
এই বইটি প্রায়শই আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের জন্য অনুঘটক হিসেবে উদ্ধৃত করা হয় এবং মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তারপর থেকে পরিবেশ সাংবাদিকতা, সাংবাদিকতার একটি প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান জনসচেতনতার সাথে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরিবেশ সাংবাদিকতা আরও বেশি সমালোচনামূলক হয়ে উঠেছে।
এসব সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে, পরিবেশ সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়েরই মুখোমুখি হতে শুরু করে।
বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট, বিশেষ করে, পরিবেশগত প্রতিবেদনে জনসাধারণের আগ্রহ বাড়িয়েছে, অনেক সংবাদ সংস্থা জলবায়ু-সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর কভারেজ বাড়িয়েছে।
এই মাধ্যমে সাংবাদিকতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এটি আধুনিক সাংবাদিকতার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরীর অবদানকে মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন >>> গণমাধ্যম ততটাই সাহসী, যতটা তার সম্পাদক
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার কারণে বাংলাদেশে পরিবেশ সাংবাদিকতাও গুরুত্ব পাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং পরিবেশের অবনতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, পরিবেশ সাংবাদিকতার জন্য জটিল সমস্যাগুলোর গভীর উপলব্ধি এবং সাংবাদিকদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও নির্ভুল এবং নিরপেক্ষতা প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। এই জায়গায় সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিবেদনগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। যাতে তারা জানতে এবং বুঝতে পারে।
দেলোয়ার জাহিদ ।। বীর মুক্তিযোদ্ধা; সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক