বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা
পৃথিবীব্যাপী এখন জ্বালানি সংকট প্রকট। তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। এই সময়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকে থাকতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকে থাকতে আমি মনে করি তিনটা পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। এতে করে তারা নিজেরা যেমন টিকে থাকতে পারবেন তেমনি পরিবারও সচ্ছল রাখতে পারবেন।
করোনায় সময় উদ্যোক্তারা পারিবারিক, আর্থসামাজিক জায়গায় অবদান রেখেছেন, ঠিক তেমনভাবে তারা নিজেদের স্বকীয় পণ্য বা সেবার ব্যবসা ধরে রাখতে পারেন। মানে বাজারে যে পণ্যের চাহিদা আছে এবং অন্যরা তত বেশি বিক্রি করেন না এই ধরনের পণ্য বা সেবার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারেন।
আরও পড়ুন : পূজার বাজার ও পূজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি
দ্বিতীয় বিষয় হলো, খরচ কমানো। যে ধরনের পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করছেন তার প্রচার এবং প্রসারে যত কম ব্যয় করা যায় ততই মঙ্গল।
পণ্য বা সেবার প্রচারে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং খুব ভালো কাজে দেয়। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রচার এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে তা সবার কাজে লাগে এবং ভোক্তারা তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, ভ্যাট-ট্যাক্স, বিপণন কৌশলসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন যেটা বৈশ্বিক পরিস্থিতি বা যেকোনো সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।
শেষ যে বিষয়টি আমি মনে করি তা হলো, উদ্যোক্তাদের হতে হবে প্রশিক্ষণমুখী। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, ভ্যাট-ট্যাক্স, বিপণন কৌশলসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন যেটা বৈশ্বিক পরিস্থিতি বা যেকোনো সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।
অর্থনীতিতে উদ্যোক্তার অবদান
অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বরং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই খাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই।
আরও পড়ুন : বাজেটে নারী ও নারী উদ্যোক্তা
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে আইসিটি বিভাগ ১ হাজার নারী উদ্যোক্তাদের অনুদান দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।
এটা আসলে শুরু। এর পাশাপাশি মহিলা অধিদপ্তর, যুব অধিদপ্তর এবং বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তা তৈরি, প্রশিক্ষণে বেশ সফলতার সাথে কাজ করছেন। এতে করে উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়ছে।
পণ্য বা সেবার প্রচারে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং খুব ভালো কাজে দেয়। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রচার এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে তা সবার কাজে লাগে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি ‘উৎপাদন শিল্প জরিপ’–এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক দশকে দেশে ছোট কারখানার সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৬৪০টি। ফলে সারা দেশে বর্তমানে ছোট কারখানা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩০৬টি।
আরও পড়ুন : নারী উদ্যোক্তার সংকট ও সমাধান
দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে–গড়ে ওঠা এসব কারখানায় পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, বেকারি পণ্য উৎপাদিত হয়। তাছাড়া রাইস মিল তথা চালকলসহ নানা ধরনের ছোট কারখানাও রয়েছে অনেক।
সংগঠনের ভূমিকা
সংকট আমাদের জন্য খুব কঠিন। বিশেষ করে প্রান্তিক থেকে শহরের উদ্যোক্তাদের জন্য। তাদের চ্যালেঞ্জ বেশি। ই-ক্যাব থেকেও নিয়মিত উদ্যোক্তাদের নানা বিষয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পলিসি মেকার পর্যায়ে কথা বলা হচ্ছে।
আমরা পরিস্থিতি বোঝার জন্য সময় নিচ্ছি কারণ আমাদের বিশ্বাস বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সরকার উদ্যোক্তাবান্ধব চিন্তা অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
বিভিন্ন সংকটে উদ্যোক্তাদের হয়ে কথা বলার জন্য ই-ক্যাব সবসময়ই জোরালো ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বেসিস নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট শুরু থেকেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে। যেহেতু সংকট বিশ্বব্যাপী তাই আমাদের জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই–কমার্স ফোরাম (উই)