পূজার বাজার ও পূজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি
দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। পূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ আয়োজন থেকে অনলাইন থেকে শপিংমলগুলোয়। পূজার সময় বাংলাদেশের রঙিন চিত্রটা আমাদের চোখে পড়ে। পূজা শুরুর আগে পূজার শপিংয়ের চিত্রটা ধরা পড়ে নগরীর জনপ্রিয় শপিংমলগুলোয়। কয়েকবছর ধরে অনলাইন বেচাকেনায়ও পূজার প্রভাব পড়েছে।
অনলাইন শপ ও মার্কেট প্লেসগুলো পূজাকে ঘিরে নানারকম অফার দেয়। এসব অফারে তাদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে ফ্যাশন বা পোশাকে বিক্রি ব্র্যান্ডশপগুলোর ৫-৭ শতাংশ বেড়ে যায়। যেসব ব্র্যান্ডশপ পূজা উপলক্ষে বিশেষ ডিজাইন নিয়ে আসে তাদের বিক্রি আরও বাড়ে।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পূজা চলাকালীন বাজারে খুব একটা সাড়া পড়েনি। ২০২০ সালে শপিং সেন্টারে ভিড় যেমন ছিল না অনলাইনেও খুব বেশি সাড়া পড়েনি। কিছু বিক্রি বেড়েছে পোশাক ও গয়নায়।
অনলাইন শপ ও মার্কেট প্লেসগুলো পূজাকে ঘিরে নানারকম অফার দেয়। এসব অফারে তাদের ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি বাড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে ফ্যাশন বা পোশাকে বিক্রি ব্র্যান্ডশপগুলোর ৫-৭ শতাংশ বেড়ে যায়...
চলতি বছরও যারা পোশাক ও গয়না বিক্রি করে তাদের পূজার অফারে সাড়া পড়েছে, তবে আরও বেশি সাড়া পড়লে ভালো হতো। বর্তমানে সবধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই প্রভাব কেনাকাটায়ও পড়েছে।
অন্যান্য বছর দেশের অনেকে পূজার শপিং করতে কলকাতায় যান। এবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে সেই হারও আগের মতো নয়। অবশ্য আমাদের দেশের বিশেষ উৎসবগুলোয় কলকাতাভিত্তিক কেনাকাটার প্রবণতা এখনো প্রবল।
দেশের প্রধান কয়েকটি লজিস্টিক কোম্পানি যারা ই-কমার্সের পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, পূজা উপলক্ষে পণ্যের বেচা-বিক্রির বৃদ্ধির হার মোটামুটি। তারাও আশাবাদী, পরিবেশ স্থিতিশীল হলে এই হার আরও বাড়বে। প্রতিদিন কমবেশি ৩ লাখ অর্ডার ই-কমার্সে ডেলিভারি হয়। পূজা উপলক্ষে তা বেড়েছে।
পুরোনো ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ বিভিন্ন গয়নার দোকানে পূজার বেচাকেনা চলছে। অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে গয়না এবং ব্র্যান্ডের নতুন ডিজাইনের পোশাকে। সাথে পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে গয়না বিক্রি হচ্ছে।
সোনার মধ্যে নানারকম পাথর বসানো গয়না বিক্রি হয় এই সময়ে। কিন্তু সোনার দাম এখন অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ফলে সোনার বাজারেও ক্রেতার আনাগোনা আগের তুলনায় কম। কিছু পাথরের গয়না ও কৃত্রিম সোনার গয়নাতে বাহারি পাথরের কাজ করা অলংকার এখন অনেকের পছন্দের। বিশেষ করে শাড়ির রং-এর সাথে মিলিয়ে সোনালী গয়নার পাথরের রং পছন্দ করছেন নারী ক্রেতারা।
পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন অনলাইন শপের অফারে সাড়া পড়েছে। সাড়া পড়েছে ই-কমার্সের মোট ডেলিভারির ক্ষেত্রেও। সবসময় বর্ষার শেষের দিকে কিছু কেনাকাটা হয়। পূজার ছুটির সাথে পর্যটনের মৌসুম শুরু হলে কেনাকাটা বাড়ে।
পুরোনো ঢাকার শাঁখারি বাজারসহ বিভিন্ন গয়নার দোকানে পূজার বেচাকেনা চলছে। অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে গয়না এবং ব্র্যান্ডের নতুন ডিজাইনের পোশাকে...
ধারণা করা হচ্ছে, পূজার সময় বিশেষ করে অক্টোবরের কিছুটা প্রভাব বড়তে পারে। সাধারণত চাকরিজীবীরা মাসের প্রথমে বেতন পেলে তারা কেনাকাটা করতে পারে। পূজার নতুন পোশাক ও অলংকার ক্রয়ের মাধ্যমে পূজার অর্থনীতিকে ঘিরে যে বাড়তি লেনদেন হওয়ার কথা সেটা হওয়ার জন্য বাজার স্থিতিশীলতা হওয়া জরুরি।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, অন্যান্যবারের মতো এবারও অনলাইনে লেনদেনে পূজা উপলক্ষে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার করেছে। শপিংমল ও বিভিন্ন ব্র্যান্ড হাউজে পূজার অফার এখন অঢেল। এতে বোঝা যায়, পূজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি আরও সুদৃঢ় হোক তা সবার চাওয়া।
দুর্গাপূজার আগে এবং পরে এই দশ দিনে অনলাইন শপগুলোয় ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার বাড়তি লেনদেন হতে পারে। লেনদেন আরও বাড়তে পারে। এই সময়ে অনেকে ভ্রমণে যান তাই ভ্রমণকেন্দ্রিক কিছু কেনাকাটা হয়, এছাড়া বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বিছানার চাদর এবং নতুন জুতা কেনেন অনেকে। তাই সার্বিকভাবে পূজার কেনাকাটা আলাদা করা কঠিন।
যদিও পূজাকেন্দ্রিক অর্থনীতির পরিধি কত বড় তা আলাদা করে গবেষণার দাবি রাখে। এতে করে অর্থনৈতিক ঘাটতি যেমন জানা যায়, জানা যায় নতুন আর কী কী পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন সেই প্রসঙ্গে।
পূজার অর্থনীতি আসলে আলাদা কোনো অর্থনীতি নয়। দেশের মানুষ যারা পূজা বা সংস্কৃতি পালন করেন তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটা অংশ। যেহেতু এই সময়ে অনেক ই-কমার্স নাইন নাইন এবং টেন টেন নামে অফার ছাড়েন তাই অফারকেন্দ্রিক কিছু বিক্রি বাড়ে। সেটাও অর্থনৈতিকভাবে কোনো প্রভাবের মধ্যে পড়ে না।
তবে অনলাইন শপগুলো এবং মার্কেট প্লেসগুলো ক্রেতার নাম ও পূজার অফারের বিক্রির হিসাব থেকে এর সঠিক চিত্র বের করা যেতে পারে। যেহেতু এই বিষয়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি এবং বিক্রেতারা তাদের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেন না। তাই এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া কঠিন।
মনে রাখতে হবে, ই-কমার্সের ক্রেতা মাত্র ৫ শতাংশের মতো এবং নিয়মিত ক্রেতা ১ শতাংশেরও কম। হয়তো আমরা যারা ইন্টারনেটে, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করি তাদের কাছে যেমনটা মনে হয় বিষয়টা তেমন নয়।
দেশের মোট বাজার অর্থনীতি বা খুচরা লেনদেনের তুলনায় ই-কমার্সের লেনদেন নগণ্য। যেহেতু এটা দিন দিন বাড়ছে সেজন্য আমরা বিষয়টা নিয়ে আশাবাদী।
পূজাকেন্দ্রিক অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করতে হলে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রভাব তা রহিত করতে হবে। অনলাইনে পূজাকেন্দ্রিক সেল বাড়ানোর জন্য ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, অ্যামেক্স-এর মতো ডেবিট ক্রেডিট কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে এবং তাদের এগিয়ে আসার সুযোগও করে দিতে হবে।
সারা বিশ্বে কার্ডের ক্যাশব্যাক অনলাইন বিক্রির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এছাড়া পূজা উপলক্ষ্যে অনলাইন শপগুলোর অফারসমূহ আরও আকর্ষণীয় করা প্রয়োজন আছে বৈকি।
নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই–কমার্স ফোরাম (উই)