মাতৃভাষায় ধর্ম প্রচার
অপরিসীম গুরুত্বের সাথে মাতৃভাষাকে স্মরণ করে ইসলাম। সকল জাতিতে হেদায়াতের জন্য আল্লাহপাক পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাব অথবা কিতাব বিহীন প্রত্যাদিষ্টকে ওহী দ্বারা পাঠিয়েছেন। একেক জাতির জন্য একেক ভাষা সৃষ্টি করা এটা আমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ কৃপা। আর না হয় মানুষ ভাষার মর্যাদা বুঝতো না। মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার সাথে তার উন্নতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার সাথে তার উন্নতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন।
মাতৃভাষা শিক্ষা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আল্লাহ তাআলা নবী রাসুলদের কাছে যুগে যুগে যেসব আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন, তা তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন: ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকে তার জাতির লোকদের মাতৃভাষাতেই প্রেরণ করেছি যাতে করে সে স্পষ্টভাবে তাদের বুঝিয়ে দিতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪)
যেমন হজরত দাউদ (আ.) এর কাছে যাবূর কিতাব তার মাতৃভাষা ইউনানি বা (আরামাইক) ভাষায়, হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে তাওরাত ইবরানী বা হিব্রু ভাষায়। এটাও তার মাতৃভাষা। আর সর্বশেষে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে মাতৃভাষা আরবি ভাষায় আল-কোরআন নাজিল করা হয়। এসব আসমানি কিতাব যদি মাতৃভাষায় নাযিল না করতেন তবে এগুলো নাযিলের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতো।
ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, প্রত্যেক নবী-রাসুল তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর কাজ করেছেন আর লোকদেরকে এক সৃষ্টিকর্তার দিকে আহ্বান করেছেন।
কেননা, এসব আসমানি কিতাব নাযিলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পুণ্য হাসিলের জন্য এর মর্ম অনুধাবন করা। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে-এর আলোকে জীবন ব্যবস্থা কায়েম করা। ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, প্রত্যেক নবী-রাসুল তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর কাজ করেছেন আর লোকদেরকে এক সৃষ্টিকর্তার দিকে আহ্বান করেছেন।
পবিত্র কোরআনে এসেছে: আর যদি আমি কুরআন অনারবদের ভাষায় নাযিল করতাম তবে অবশ্যই বলতো এর আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয় নি কেন? এ কেমন কথা, অনারবী কিতাব এবং আরবিভাষী রাসুল। আপনি বলুন: এ কোরআন মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও ব্যাধির প্রতিকারস্বরূপ। কিন্তু যারা ঈমান আনে না তাদের কাছে রয়েছে বধিরতা এবং কোরআন তাদের জন্য অন্ধত্বস্বরূপ। (সুরা হামিম-সাজদা: ৪৪) আল্লাহ অন্য একটি আয়াতে বলেন: ‘আমি তো কোরআন আরবিতে নাযিল করেছি এ জন্য যে, তোমরা তা বুঝবে।’ (সুরা ইউসুফ: ২)
মনের আকাঙ্ক্ষা কায়মনো বাক্যে আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে হলেও মাতৃভাষা ব্যতীত সম্ভব হয় না। মনের আকুতি প্রকাশ করে বিনতিপূর্বক প্রার্থনায় মন ও আত্মার মাঝে এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরি হয়। বান্দার আর্তি আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া না হওয়া তা একান্তই তার। নির্ধারিত দোয়ার পর আমরা যখন মাতৃভাষায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তখন কিন্তু সাময়িক শান্তির ছোঁয়া অবশ্যই আমরা লাভ করি।
মাহমুদ আহমদ ।। গবেষক ও কলামিস্ট