বন্যায় স্বাস্থ্যসেবা
বাড়ছে করোনা। কয়েকদিন আগেও বন্যায় ডুবে ছিল অসংখ্য এলাকা। এখন পানি কমছে। পাল্লা দিয়ে কখনো করোনার খবর তো কখনো বন্যার খবর পদ্মা সেতুর খবরকেও পাশে ঠেলে জায়গা করে নিচ্ছে পত্রিকার শিরোনামে।
২৫ জুন উদ্বোধন হয়েছে পদ্মার বুকে বাংলার অহংকার, বাঙালির স্বপ্ন সেতুর। পদ্মার এই খবরগুলো একটু থিতু হয়ে আসলেই যে বন্যা আর করোনা মারামারি পত্রিকার পাতায় জায়গা করে নেবে তা সহজেই অনুমেয়।
আবার আমাদের অভিজ্ঞতায় এও জানি যে, অল্প দিনে আরও কমবে বন্যার পানি, আর কমে আসবে করোনার সর্বশেষ এই ঢেউটির হাঁক-ডাকও।
আবারও সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাঙালি, পদ্মা জয়ী বাঙালি সামনে ছুটবে আরও জোরে, ঘাড়টা আরেকটু উঁচিয়ে। তবে বাঙালির এই নতুন করে ছুটে চলায় আরেকটু বাধ সাধতে পারে বন্যা পরবর্তী জটিলতাগুলো, যার অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য সংকট।
বন্যার পানি নামতে শুরু করার পরপরই, অভিজ্ঞতায় বলে, বাড়তে শুরু করবে নানা রকম সংক্রামক ব্যাধি। যার শীর্ষে আছে পেটের পীড়া আর জন্ডিস।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও। স্থানচ্যুত হয়েছে স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরাও। শুধু চিকিৎসক দিয়েইতো স্বাস্থ্যসেবা নয়। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নার্স, টেকনিশিয়ান, আয়া থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত অনেকেরই।
বন্যায় শুধু ডুবেই ছিল না, ভেসেও গেছে, গ্রামীণ জনপদে তো বটেই, এমনকি শহর এলাকাতেও সুপেয় পানির সব উৎস। ডুবে গেছে টিউবওয়েল, ভেসে গেছে স্যানিটারি ল্যাট্রিন আর পানিতে-পানিতে সয়লাব হয়েছে সুপেয় কুপেয় সব পানি-ই।
এখন বন্যার পানি নেমে গেলে তাই হু-হু করে বাড়ার শঙ্কা আছে পানিবাহিত নানা রোগ, যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস-এ আর জন্ডিস, সাথে জ্বর-জারিসহ অনেক কিছুই।
পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও। স্থানচ্যুত হয়েছে স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরাও। শুধু চিকিৎসক দিয়েইতো স্বাস্থ্যসেবা নয়। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নার্স, টেকনিশিয়ান, আয়া থেকে শুরু করে ক্লিনার পর্যন্ত অনেকেরই। কাজেই বন্যার পরপর মানুষের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা যখন বাড়বে তখন তা নিশ্চিত করাটাও হয়ে দাঁড়াবে দারুণ কঠিন।
নতুন করে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বাড়ছে করোনাও। কারণ বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পক্ষে আর যাই হোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আর মাস্ক পরে ঘোরাঘুরি করা সম্ভব নয়।
বন্যাপীড়িত মানুষ যেখানে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, সেখানে পানি ফুটিয়ে খাবেন এমনটা প্রত্যাশা করা উচিত না।
সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহখানেকের পর বন্যা যখন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে তারপরে আরও কয়েক সপ্তাহ জুড়ে স্বাস্থ্য সংকটের খবরগুলো মাঝে-মাঝেই পত্রিকায় বিব্রতকর শিরোনামের জন্ম দিবে বলে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি ঘুরাতে হলে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি আর সচেতনতার অন্য কোনো বিকল্প কিন্তু নেই।
আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি বন্যার্তদের পাশে শুভেচ্ছা নিদর্শন নিয়ে ছুটছে মানুষ। পৌঁছে যাচ্ছে শুকনা থেকে শুরু করে রান্না করা খাবারও। আমি জানি পৌঁছে যাচ্ছে মোমবাতি দিয়াশলাই থেকে শুরু করে খাবার স্যালাইন আর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও।
আমাদের জোর দিতে হবে এই জায়গায়। বন্যাপীড়িত মানুষ যেখানে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, সেখানে পানি ফুটিয়ে খাবেন এমনটা প্রত্যাশা করা উচিত না। তাই তাদের সুবিধা এবং দেশের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের সরবরাহ আর ব্যবহার নিশ্চিত করায় নজর দিতে হবে।
আর পানি যখন কমে যাবে তখন যতটুকু পারা যায় স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলায়ও মনোযোগী হওয়া দরকার। নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করায়ও। আশার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বন্যাপিড়ীত এলাকায় এরই মধ্যে কাজ করছে ছয় শতাধিক মেডিকেল টিম, তৈরি আছে ছয় সহস্রাধিক। অতএব সতর্কতা, সচেতনতা আর সদিচ্ছার প্রয়োগ ঠিক মতো ঘটানো গেলে ঝামেলা খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরেকটি কথাও বলেছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার মন্ত্রণালয়ের হেলিকপ্টার বা ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের মতো নৌযানের সুবিধা নেই। এই বিষয় মাথায় রেখে আগামী বছর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।। ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ