শেখ হাসিনার পদ্মা বিজয়
পদ্মা সেতু শুধুই কি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত মাধ্যম হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি পাবে? পদ্মা সেতু একজন অনন্য অসাধারণ দেশপ্রেমিক আপসহীন মহান নেতার কন্যার ইতিহাস। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর যার নিজ দেশে ফেরায় ছিল নিষেধাজ্ঞা, যিনি ছোট বোনসহ বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন, পরিবারের সবাইকে হারিয়ে যিনি এক বুক হাহাকার নিয়ে পরবাসী জীবন কাটিয়েছেন-পদ্মা সেতু তার হাতে গড়া।
প্রবাসে এক রকম করে জীবন শেখ হাসিনা পার করে দিতেই পারতেন। পারতেন নিরাপদ জীবন বেছে নিতে। কিন্তু তিনি বাংলার মানুষের জন্য সব কিছু উপেক্ষা করে ফিরে আসেন।
এই ফিরে আসা তার জন্য কতটুকু কঠিন ছিল, তা শুধু তিনিই জানেন। ১৯৭১-এর সেই ঘাতক আর ১৯৭৫-এর ঘাতকদের তখন প্রকাশ্য আঁতাত। সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা।
রাষ্ট্র তখন ৩০ লাখ শহীদের রক্তের পতাকাকে অবমাননা করে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে। রাষ্ট্র জয় বাংলার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা থেকে অনাক্রম্যতা বা শাস্তি এড়ানোর ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ আইন প্রণয়ন করে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন।
জিয়াউর রহমানসহ আরও কিছু দেশবিরোধী পাকিস্তানি দোসরদের ঘৃণ্য চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করে! সেই দেশে তার কন্যারা নিষিদ্ধ!
কিন্তু ‘বাপের বেটি’, ‘শেখের বেটি’ সকল অবরোধ, সকল রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বৃষ্টি মুখর এক বিকেলে (১৯৮১ সালের ১৭ মে) বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।
সেদিন আকাশ বাতাস শোকে অশ্রু বিসর্জন করেছিল। আর তিনি দেশের মাটি ছুঁয়ে বলেছিলেন, আমি সব হারিয়ে আপনাদের জন্য ফিরে এসেছি।
আজ ২০২২। ১৯৮১ থেকে এই সময়ের ইতিহাস তার। তিনি সৃষ্টি করেছেন এই নতুন ইতিহাস। ছবির মতো করে এঁকেছেন বাংলাদেশকে। একটু একটু করে দেশকে নিয়ে গেছেন হিমালয়ের চেয়েও উচ্চতর আসনে।
উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল মানসিকতা, আধুনিক জীবনবোধ, চিন্তা-মুক্তি-প্রগতি আমাদের এখনকার সময়ের চিত্র। আমরা জলে-স্থলে মহাকাশে ওড়াই আমাদের পতাকা। স্বাধীন দুর্বার অবিচল চঞ্চল আমরা।
আমরা এখন কথা বলতে পারি, সমালোচনার টকশো’র শাণিত ক্ষুরধার তরবারি রাষ্ট্রকে এখন প্রশ্ন করতে পারে, আমাদের প্রজন্ম রাজপথে নেমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আদায় করতে পেরেছে।
ইনডেমনিটি’র কালো অধ্যাদেশ গুঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পেরেছে। আমরা ব্যবহার করি চতুর্থ/পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক। আমরা ডিজিটাল। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা মায়ের নাম দিয়ে ব্যাংক পাসপোর্ট আইডি নিয়ে নারীর ক্ষমতাকে সাদরে গ্রহণ করেছি।
আমরা সাহসী হয়ে গেছি, আমাদের গৌরব আমাদের অর্জনকে আমরা বুঝতে জানতে চিনতে শিখেছি। এই দেশ এখন আর কেউ বিদেশি চক্রান্তকারীদের কাছে দিতে পারবে না।
সেই ’৭৫ সালের পর ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত হয়েছে, আজকের প্রজন্ম আজকের রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়ের শিখরে। সেই শিখরে যিনি পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি শেখ হাসিনা। কিছু দেশি স্বার্থান্বেষী মানুষ যখন বিদেশিদের নিয়ে আমাদের উন্নয়নকে বাঁধা দেয়, হয়তো সেই সব কূজনরা ভেবেছিল থমকে যাবে পথঘাট, থেমে যাবে সব প্রকল্প, কোনোদিন হবে না পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনা মহান নেতার সন্তান। যিনি ভয় পাননি কোনো কিছুকেই, ন্যায্যতার বিচারে তিনি অকুতোভয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি এদেশের যোগ্য রাষ্ট্র নায়ক, সৎ প্রধানমন্ত্রী।
যিনি দেশের স্বার্থে দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন, দিচ্ছেন। তিনি ১৭ মে ১৯৮১ সালে যা বলেছেন এদেশের মানুষের সেবা করতে ফিরে এসেছেন, তাই করে যাচ্ছেন।
প্রমত্ত পদ্মার বুকে সড়ক, রেলসহ এমন একটি সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন। আজ সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। এই স্বপ্ন সম্মিলিতভাবে পুরো বাংলাদেশকে তিনি দেখিয়েছেন এবং বলেছিলেন আমরা আমাদের টাকায় আমাদের পদ্মা সেতু বানাব, আমাদের কোনো বিদেশি টাকা লাগবে না।
তিনি পুরো জাতিকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের মতো এক পতাকাতলে নিয়ে এলেন। একতাই শক্তি, শেখ হাসিনায় মুক্তি। আমরা আজ পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের ওপর পদ্মা সেতুর ইতিহাস গাঁথায় শেখ হাসিনার সাথে সাথী হয়ে হাজার বছরের রূপকথা হয়ে থাকব।
সেই রূপকথার রাজকন্যা দেশের জন্য, দশের জন্য অনন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশকে, এদেশের মানুষকে নিয়ে যাচ্ছেন সম্মানজনক গর্বিত এক যাত্রাপথে।
আমাদের দেশ। আমাদের ভালোবাসা। আমাদের শেখ হাসিনা।
রোকেয়া প্রাচী ।। অভিনেত্রী