বিশ্ব পরিবেশ দিবস : আমাদের ব্যর্থতা ও করণীয়
পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৫ জুন পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘Only One Earth’ (কেবল একটাই পৃথিবী)—এই স্লোগানের মাধ্যমে ‘প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই জীবনযাপন’ তথা ‘Living Sustainably in Harmony with Nature’ (প্রকৃতির সাথে সাদৃশ্যে টেকসই জীবনযাপন)-এর ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
১৯৭৪ সালে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠিত হয় ‘কেবল একটাই পৃথিবী’—থিম নিয়ে। ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও এই সত্যটি এখনো প্রাসঙ্গিক—এই গ্রহই আমাদের একমাত্র আবাসস্থল। সারা পৃথিবীর মানুষজন তো বটেই, বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধানদেরও এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন ও উদ্যোগী হওয়া জরুরি।
গত বছরের কর্মসূচি ছিল ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ যা চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ পুরো এক দশক ধরে চলবে গত বছরের কর্মযজ্ঞ। বাস্তুসংস্থান (ইকোলজি) অদৃশ্য ও দৃশ্যমান দুই ধরনের সুবিধাই আমাদের দিয়ে থাকে।
জীবনধারণের জন্য জল, খাবার, মসলা, কাপড়ের উপকরণ, আশ্রয়স্থল, ওষুধ ইত্যাদি থেকে শুরু করে জীবনদায়ী অক্সিজেন, কোটি কোটি মানুষের জীবিকার অবলম্বন, নবায়নযোগ্য শক্তি (সৌরশক্তি ও জলবিদ্যুৎ) উৎপাদন সবকিছুর মূলে রয়েছে এই বাস্তুতন্ত্র। বাংলাদেশে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রগুলো দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, জাতীয় পর্যায়ে বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের বিষয় আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি।
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে যায়, আয়তনে যা কোরিয়ার সমান বা কোস্টারিকার দ্বিগুণ (এফএও ও ইউএনইপি, ২০২০)। বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে বন উজাড়ের হার প্রায় দ্বিগুণ। এই দেশে ১৯৯০-২০১৫ সালে বার্ষিক বন উজাড়ের হার ছিল দশমিক ২ শতাংশ (এফএও, ২০১৫)।
২০১০ সালে বাংলাদেশে ২ দশমিক ২২ মিলিয়ন হেক্টর গাছের আচ্ছাদন ছিল, যা মোট ভূমির প্রায় ১৬ শতাংশ। ২০২০ সালে আমাদের প্রায় ২১ দশমিক ৫ হাজার হেক্টর গাছের আচ্ছাদন হ্রাস পেয়েছে, যা ১১ দশমিক ৬ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণের সমতুল্য। বন উজাড়ের সাথে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ—বায়ু, পানি, মাটি, শব্দ দূষণসহ বাড়ছে সমুদ্র দূষণও। সমুদ্র দূষণের পূর্ববর্তী ধাপ হলো নদী দূষণ।
বাংলাদেশে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রগুলো দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, জাতীয় পর্যায়ে বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের বিষয় আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি।
২০১১ সালের বুড়িগঙ্গা নদীর বর্জ্য অপসারণ প্রকল্প থেকেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি সমুদ্র দূষণের তীব্রতা কত। ওই সময়ে নদীর তলদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পলিথিন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী, টিনের কোটা, লৌহজাত দ্রব্য, কাঠের টুকরা ইত্যাদি উঠে আসে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব। মার্কিন আবহাওয়াবিদ চলতি বছর ২১টি ভয়াবহ ঝড়ের আশঙ্কা করছেন। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, এগুলোর মধ্যে ১০টির মতো হারিকেন রয়েছে।
এই বছর জুন থেকে নভেম্বরেই ৩ থেকে ৬টির মতো ভয়াবহ হারিকেন দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং সাগরের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আন্তর্জাতিক দুই প্রতিষ্ঠান ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি সেন্টারের (এনআরসি) প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে অভ্যন্তরীণ নতুন বাস্তুচ্যুতির ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
গত বছর ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ত্রাণ সংস্থা শেল্টারবক্স এক গবেষণায় বলছে, বিভিন্ন ঝড়ের কারণে আগামী দুই দশকে অন্তত ৪০ কোটির বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে ২০ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন বলেও সতর্ক করা হয়।
মানব স্বাস্থ্য বাস্তুসংস্থান স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে নিবিড়ভাবে জড়িত তার আরও একটি ইঙ্গিত বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৯৮০ সাল থেকে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব তিনগুণের বেশি বেড়েছে। এদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি রোগ জুনোটিক অর্থাৎ প্রাণিবাহিত।
আরও জানা যায় যে, মানুষের সব সংক্রামক রোগের ৬০ শতাংশই জুনোটিক। প্রাকৃতিক বাসস্থানের ধ্বংস ও ক্ষতিসাধন, জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবা হ্রাস, অবৈধ বন্য প্রাণী শিকারসহ বিভিন্ন কারণে করোনা, ইবোলা, সার্স, সোয়াইন ও অ্যাভিয়ান ফ্লুসহ জুনোটিক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় বাজেটে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। যদিও বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু তহবিলে ২০০৯-২০১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ অর্থ বছরে প্রতি বছর ৭০০ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থ বছর ৪০০ কোটি প্রণয়ন করে কিন্তু ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ২০০ কোটি, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরেও প্রতি বছর ১০০ কোটি করে জলবায়ু তহবিল গঠন করে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ব্যবহারের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থাকায় বরাদ্দ কমতে থাকে।
যেখানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা সেখানে ২০২০-২১ অর্থ বছরে এসে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয় ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থ বছরের তুলনায় ২৫০ কোটি টাকা কম। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতেও ২০২০-২১ অর্থ বছরের বরাদ্দ পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় কম প্রস্তাব করা হয়েছে।
আবার ২০২০-২১ অর্থ বছরে এই মন্ত্রণালয়ে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা মোট বরাদ্দের মাত্র ০.২ শতাংশ। সুতরাং দেখা যাছে, যখন পরিবেশ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন তখন দেখা যায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বাজেটের আকার না বেড়ে বরং ক্রমাগত সংকুচিত হয়েছে।
২০১৬ সালে সংশোধিত জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরির পর থেকে বেশ কয়েকটি আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা প্রণয়ন হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা পরিচালনা বিধিমালা (২০১৬), বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন (২০১৭), সুরক্ষিত অঞ্চল পরিচালনা বিধিমালা (২০১৭), জাতীয় পরিবেশ নীতি (২০১৮), বন নীতি (খসড়া ২০১৮), ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১৯৮০ সাল থেকে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব তিনগুণের বেশি বেড়েছে। এদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি রোগ জুনোটিক অর্থাৎ প্রাণিবাহিত। আরও জানা যায় যে, মানুষের সব সংক্রামক রোগের ৬০ শতাংশই জুনোটিক।
আমরা আশা করি, এইসব নীতি এবং বিধিগুলো টেকসই ভিত্তিতে বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারের দশক’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারি অষ্টম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
আমরা বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য কিছু করণীয় বিষয় বিবেচনা করতে পারি—আমরা একটি জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারি যাতে করে ২০৪০ বা ২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য অবক্ষয়ের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার সম্ভব হয়।
প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বনজ সম্পদ উন্নয়ন ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গ্রিন বাজেট প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তার মধ্যে তহবিল ঘাটতিই রয়েছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যমান আর্থিক ব্যবস্থার ব্যবধান হ্রাসের পাশাপাশি এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ আন্দোলন’ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি পরিবেশের বাজেট ব্যবহারে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। সম্মিলিতভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ নেওয়া জরুরি—
পিএমডি (এনভায়রনমেন্ট, প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট):
বর্তমান বাস্তবতার ভিত্তিতে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তরের ‘পরিকল্পনা সেল’-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
পরিবেশ মহাকর্মপরিকল্পনা:
পরিবেশ সংরক্ষণ ও ইকোসিস্টেম ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে যুক্ত করে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নয়, রেভিনিউ বাজেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জলাধার রক্ষা:
দেশের নদী-জলাধারের দূষণ বন্ধে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
প্রতিটি নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালি বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর এবং অন্যান্য বর্জ্য বিশেষ করে হাসপাতাল বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তার মধ্যে তহবিল ঘাটতিই রয়েছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা তথা বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি, তলদেশ ও উপকূলের সব প্রাণিজ ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের জন্য সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং সমুদ্র সম্পদের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
করারোপ করা:
গ্রিনট্যাক্স আরোপ, এসি ব্যবহারকারী, বিলবোর্ড-এর ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহারপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের সমপরিমাণ হারে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা, সিএনজি চালিত প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে। শিল্প বর্জ্য, ই-বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ, বাস্তবায়নে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
নগরায়ণ:
অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও নাগরিক সুবিধাদি না থাকার কারণে অধিকাংশ নগরগুলো আজ ইট-পাথরের বস্তিতে পরিণত হচ্ছে। যা সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন করছে।
কৃষি ব্যবস্থা:
কৃষি বিভাগের জৈব সার ব্যবহার, সমন্বিত বালাই নাশক (আইপিএম) কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি; আরবান কৃষি বৃদ্ধিতে প্রকল্প গ্রহণ করা; কৃষকের উৎপাদিত ফসল স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের লক্ষ্যে কোল্ডস্টোরেজের সংখ্যা বৃদ্ধি করা; শহরের জৈব বর্জ্যকে কৃষিতে সার হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্দ প্রদানসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেন পরিবেশ ও কৃষি জমির ক্ষতি না করতে পারে সেই লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের এমন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার, যাতে প্রকৃতিবান্ধব সমাধানের লক্ষ্য নীতিনির্ধারকেরা কৌশলগত পরিবর্তন আনতে পারেন। ২০২১ সালের মধ্যেই আমাদের অবনমিত বাস্তুসংস্থান, বিশেষত বন ও জলাভূমির পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা দরকার।
বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে, তাতে যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নেওয়ার সময় পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মধ্যে একটি ভারসাম্য নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নেই।
কেননা, বন ধ্বংস হয়ে গেছে, পাহাড় ন্যাড়া হয়ে গেছে, পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে গেছে, এমন কোনো দেশকে কেউ উন্নত বলবে না। এতদসংক্রান্ত নীতিমালা, বিধিমালা এবং সেক্টরোরাল কর্ম পরিকল্পনাগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূলধারায় সন্নিবেশিত করতে হবে।
পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ‘Only One Earth’ (কেবলমাত্র একটাই পৃথিবী) গঠনে, বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বৈশ্বিক তহবিল গঠনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় একটি অংশীদারত্ব তৈরি করা প্রয়োজন। জনসাধারণের নিজেদের প্রচেষ্টায় সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে পারে।
ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ ।। গবেষক ও অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]