রক্তিমের জ্ঞান ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা
বাবা হারানোর দিন কয়েক পরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচ ভাই। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরেক ভাই রক্তিম সুশীল। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) আছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলেও আজ বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি রক্তিমের। তবে চিকিৎসকরা জ্ঞান ফেরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
চমেকের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রক্তিম সুশীলের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। গত তিন-চার দিন ধরে একই অবস্থায় আছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে।
রক্তিমের চিকিৎসার ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এ চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে যেসব ওষুধ থাকে তার সবকিছুই রক্তিমকে দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ সরবরাহ না থাকলে তখন হয়তবা কিছু ওষুধ বাইরে থেকে রোগীর স্বজনদের আনা লাগে। তবে চমেক হাসপাতালের পরিচালক মহোদয় থেকে সবাই রক্তিমের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় রক্তিম সুশীলের ভাই অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও স্মরণ সুশীল নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় আহত রক্তিমকে ওই দিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রক্তিমের শ্যালক অনুপম শর্মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুলাভাইয়ের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আমরা আইসিইউ’র বারান্দায় দুলাভাইয়ের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছি।
চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার ৮০ শতাংশ ওষুধ দিচ্ছে বলতে পারি। বাকি ২০ শতাংশ ওষুধ বাইরে থেকে এনে দিতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালে ওষুধ থাকলে তারা দিয়ে দেন। না থাকলে আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয়। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে নগদ অর্থ পাইনি এখনও রক্তিম ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। তবে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, যা দিয়ে চিকিৎসার খরচ চালাতে হচ্ছে।
অনুপম বলেন, দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দিন ৮ ফেব্রুয়ারি চমেকে দুলাভাইয়ের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেখানে না পেয়ে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে খরচ অনেক বেশি। ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ম্যাক্সে একদিন রেখে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। জেনারেল হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা চলে। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি আবার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চমেকের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছে। দুলাভাইয়ের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আমার বোন, ভাগ্নেসহ পুরো পরিবার তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সদ্য প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) নিহত হন। ঘটনার ১০ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। স্থানীয় একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে একসঙ্গে ৯ ভাই-বোন (৭ ভাই ও ২ বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চার জনের মৃত্যু হয়, বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই।
এ ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ে মুন্নী সুশীল। আহত হন আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।
এদিকে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলামকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাব। তাকে আটকের পর র্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় অতিরিক্ত কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দিতে বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে খেয়াল করেননি তিনি। গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে থাকায় কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
কেএম/এসএসএইচ