ফাস ফাইন্যান্স থেকে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতে ১৩ মামলা
ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩ মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া ও কাগুজে ১৩ প্রতিষ্ঠানের নামে জাল নথিপত্র প্রস্তুত করে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পি কে হালদার, এন্ডবি নামে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ফাস ফাইন্যান্সের এম ডি রাসেল শাহরিয়ারসহ প্রতিষ্ঠানের ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক এম.ডি রাসেল শাহরিয়ারকে গতকাল (মঙ্গলবার) তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে। তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।
দুদক জানায়, প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান শেষে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩ মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মামলায়ই ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক এম.ডি মো. রাসেল শাহরিয়ার ও পি. কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয় ও বাকি ১২ মামলা আজ রুজু করা হবে। ১২ মামলায় ৪৭৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে
ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এন্ডবি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৪ কোটি, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ ৪৫ কোটি টাকা, নিউট্রিক্যাল ৩০ কোটি টাকা, এস এ এন্টারপ্রাইজ ৪২ কোটি টাকা, সুখাদা ৪০ কোটি টাকা, মটিবি মেরিন ৪০ কোটি টাকা, হাল ইন্টারন্যাশনাল ৪৫ কোটি টাকা, স্বন্দীপ কর্পোরেশন ৪০ কোটি টাকা, দিয়া শিপিং ৪৪ কোটি টাকা, মুন এন্টারপ্রাইজ ৩৫ কোটি টাকা, বর্ণ ৩৮ কোটি টাকা, আরবি ৪০ কোটি টাকা এবং মেরিন ট্রাস্ট ৪০ কোটি টাকাসহ মোট ৫২৩ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বোর্ড সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিদেশ গমনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক। পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে এখন পর্যন্ত ৫২ আসামি ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। ওই টিম এরই মধ্যে ১৫টি মামলা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুদক।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর গত বছরের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পিকে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন এর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। তার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরএম/এসকেডি