ক্রু সংকটে বন্ধ চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে চলাচলকারী ডেমু ট্রেন
লোকো মাস্টার, সহকারী লোকো মাস্টার ও গার্ড (ক্রু) পদে লোকবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে নাজিরহাট রুটে চলাচলকারী একজোড়া ডেমু ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী। তিনি বলেন, লোকো মাস্টার ও সহকারী লোকো মাস্টার পদে লোকবল না থাকায় নাজিরহাটগামী এক জোড়া ডেমু ট্রেন চলাচল আজ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আবার কখন চালু হবে ট্রেনটি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চালু হওয়ার আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি ট্রেনটি ২৫ মিনিট বিলম্বে ৩টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী বলেন, ট্রেনের একটি বগিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, তাই নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মাইলেজ জটিলতা নিয়ে নির্ধারিত সময়ের বাইরে ট্রেন চালাচ্ছেন না রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীরা। ফলে ট্রেনে ক্রু সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশল দপ্তর থেকে নাজিরহাট রুটে একজোড়া ডেমু ট্রেন বন্ধ রাখার আদেশ আসে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল থেকেই এ আদেশ কার্যকর হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে শুধু সকাল সাড়ে ১১টায় যে ট্রেনটি ছেড়ে যেত সেটির যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। নাজিরহাট রোডে বাকি ট্রেনগুলো নিয়ম মেনে চলবে।
উল্লেখ্য, মাইলেজ ইস্যুতে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। সম্প্রতি তারা ঘোষণা দেন, বেতন-ভাতা আগের নিয়মে বহাল না রাখলে ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করবেন না। তারপর থেকে ট্রেন চালকের সংকট দেখা দেয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, এত দিন রেলের জনবল সংকটের কারণে আমরা অতিরিক্ত সময় ডিউটি করেছি। আমরা আগে বিশ্রাম না নিয়ে অতিরিক্ত সময় ডিউটি করলে সুযোগ-সুবিধা পেতাম। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। যাতে আমরা সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে বিশ্রাম না নিয়ে আমরা চাকরি করতাম। কিন্তু আমাদের মাইলেজ সুবিধা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা এক বছর ধরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমাদের বিভিন্ন দাবি দিয়েছি। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে ৩১ তারিখ থেকে রানিং স্টাফরা কর্মবিরতিতে যাবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছে লোকো মাস্টার (এলএম), সহকারী লোকো মাস্টার (এএলএম), সাব-লোকো মাস্টার বা সান্টিং লোকো মাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্টদেরও মাইলেজ সুবিধায় আনা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, একজন রানিং স্টাফ তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম রয়েছে। তবে রেলের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে কাজে যুক্ত করা হলে বোনাস মাইলেজ সুবিধায় দেওয়ারও নিয়ম আছে। রেলওয়েতে তীব্র লোকবল সংকট থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রানিং স্টাফদের বিশ্রামকালীন সময়েও কাজ করতে হচ্ছে।
রানিং স্টাফরা এভাবে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে কাজ করে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ মাইলেজ জমা করেন তাদের অ্যাকাউন্টে। রেলওয়ে আইনে এ সুবিধাকে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মাইলেজকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন রেলকর্মীরা।
কেএম/এসকেডি