মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ‘চিঠি’ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রভাব ফেলবে না
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং তাদের বিদেশি বন্ধু ও লবিস্টদের বাংলাদেশ নিয়ে অনেক দিন ধরে অপপ্রচারের কারণে র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জানিয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাগুলোর চিঠির কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমাদের বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান তাদের বিদেশি বন্ধু কিংবা তাদের লবিস্ট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। সেসব অপ্রচারের কারণে ১২টি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান র্যাবকে নিষিদ্ধ করার জন্য গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘে একটি চিঠি দিয়েছে। জাতিসংঘ এটা নিয়ে কিছু করে নাই। চিঠি পেয়েছে, রেখে দিয়েছে। শিকার করেছে যে তারা চিঠি পেয়েছে। আমরা দেখি এটা নিয়ে কি করা যায়।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ যখন শান্তিরক্ষী নেয়, যাচাই-বাছাই করেই নেয়। সুতরাং এ নিয়ে আমরা চিন্তিত না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হলেই যে খুব ভালো প্রতিষ্ঠান, তা নয়। একটি প্রতিষ্ঠান বলেছে, বাংলাদেশে র্যাবে বহু লোক মেরে ফেলেছে, অমুকতমুক। তারা এক সময় বলেছিল, ইরাকে নিষিদ্ধ অস্ত্র রয়েছে। এটা বলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করেছে, সত্যি সত্যি আছে… পরের ঘটনা আপনারা জানেন।’
‘আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলব, তারা আগের কথা স্মরণ করুক। একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাদের ভুল পথে নিয়েছে। যার কারণে তাদের সেক্রেটারি অব স্টেট সরি বলতে হয়েছে’, যোগ করেন মোমেন।
র্যাব নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করতে পারে বলে মনে করেন মোমেন। তিনি বলেন, ‘র্যাব অত্যন্ত পারদর্শীভাবে ও সততার সঙ্গে কাজ করছে। এজন্য বাংলাদেশে সবার কাছে র্যাব গ্রহণযোগ্য। আমাদেরও কাজ করার আছে। যদি কোথাও আইনের ব্যত্যয় হয় অবশ্যই আমরা সেখানে অ্যাকশন নেব। ইতোমধ্যে দু-একটা কেইসে র্যাবকে এবিউসড করা হয়েছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা আপনারা জানেন। এরা কীভাবে অ্যাকশন নেবে এগুলো আমেরিকানরা শিখিয়েছে। তাদের এ রুলস অব এনগেজমেন্টে যদি অসুবিধা থাকে, আমরা আমেরিকানদের বলব তোমরা এদের ফ্রেশ ট্রেইনিং দাও। যাতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটে।’
বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না? জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘যারা দেশের অপপ্রচার করে তাদের অনেকে না জেনে করে। আবার অনেকে জেনে করে। প্রবাসে এত অপ্রচার কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এগুলো খুবই দুঃখজনক। দেশে বিভিন্ন দলমত থাকতে পারে। এক দল আরেক দলের নীতি গ্রহণ নাও করতে পারে। কিন্তু সেজন্য দেশের ক্ষতি করার জন্য আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আগাগোড়া লেগে থাকে। এটা খুব দুঃখজনক। এগুলো করার জন্য বিদেশিদের টাকা দেয়। তাদের বলে, এ দেশে যত ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করে দেন।’
‘এগুলো দেখে মনে হয়, তাদের দেশের প্রতি মমত্ব কম। দেশের প্রতি আন্তরিকতা না থাকায় এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়। আমি আশা করব, আগামীতে তারা অপকর্ম থেকে বিরত থাকবে,’ বলেন মোমেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী কয়েক বছর আমাদের সামনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ আসবে। দেশে-বিদেশে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহকর্মীরা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন মানুষের কল্যাণে যে নির্যাতন সহ্য করেছেন, মানুষের অধিকার আদায়ে যে সংগ্রাম করেছেন সেই সব বিষয় তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ যে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, সেটা সারা বিশ্বের সব জায়গায় পৌঁছে দেবে।’
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জীবিত সব মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এনআই/এসএসএইচ