‘টিকার সনদ চাইতে গেলে ব্যবসা চাঙে উঠব’
করোনা টিকার সনদ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার নয়, সরকারের এই নির্দেশনা মানছে না রাজধানীর হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো। শুধু তাই নয়, মাস্ক পরে না আসা ব্যক্তিদেরও খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গেল দুই বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁ। সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে চললে ব্যবসাই থাকবে না।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বেশ কয়েকটি হোটেল ও রোস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক দিনের মতোই একের পর এক লোকজন হোটেলে প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ এসেই খাবার টেবিলে বসে পড়ছেন, কেউ হাত-মুখ ধুয়ে তারপর খেতে বসছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। হোটেলের কর্মচারীদের বলার সঙ্গে সঙ্গে আগের মতোই খাবার দিচ্ছেন। লোকজন খাবার খেয়ে চলেও যাচ্ছেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ কাউকে জিজ্ঞাসাও করছে না, করোনা টিকার নিয়েছে কি-না কিংবা টিকার সনদ আছে কি-না? সরকারের এমন সিদ্ধান্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আমলেই নিচ্ছে না।
বাড্ডার আল্লাহর দান হোটেলের মালিক আশিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এমনিতে করোনা বেড়ে যাওয়ার খবরে দুই-তিন দিন ধরে ব্যবসা অর্ধেক কমে গেছে। তারপর যদি টিকা সনদ আছে কি-না তা দেখে খাবার দিতে চাই তাইলে ব্যবসা চাঙে উঠব।’
বাড্ডার লিংক রোডের পাশেই নান্না বিরিয়ানির ক্যাশিয়ার রোমন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের এখানে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা খেতে আসেন। তাদের অনেকের টিকা সনদ নেই। যদি টিকা সনদ না থাকলে খাবার না দেই তবে তারা অন্য হোটেলে চলে যাবে। তাই খাবার দিচ্ছি।’
নাম না প্রকাশের শর্তে শাহজাদপুরের মেজবান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনা টিকা ছাড়াই বসে খাওয়াচ্ছি। এখানে আসা কাস্টমারদের বলেছি করোনা টিকার সনদের একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখতে।’
একই কথা বলেন স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও ফুড প্যালেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টেুরেটে খেতে আসা মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সব সময় কি করোনা সনদের টিকা নিয়ে ঘোরা সম্ভব। টিকা দিলেই আর করোনা হবে না সরকার কি গ্যারান্টি দিতে পারবে? শুধু শুধু যত সব ঝামেলা! তবে সতর্ক থাকতে সবার করোনা টিকা নেওয়া জরুরি।’
ফুড প্যলেসের খেতে আসা আশিক বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার টিকা সনদ আছে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ তো কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে চাইলে ক্রেতাকে করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।’
তিনি বলেন, ‘হোটেল ও রেস্তোরাঁতে সাধারণত মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষ খাবার খেতে আসেন। এই শ্রেণির মানুষরা সাধারণত কাগজপত্র নিয়ে বের হতে চান না। আবার কাগজ সঠিক কি-না যাচাই-বাছাইয়ের সেই প্রযুক্তিও হোটেলগুলোতে নেই। ফলে একজনের কাগজ দেখিয়ে অন্যজন খেয়ে চলে যাবেন, আমরা কিছুই করতে পারব না। সুতরাং এই সিদ্ধান্তটা বাস্তবসম্মত নয়।’
ইমরান হাসান বলেন, ‘এমনিতেই দুই দফা করোনায় অনেক দিন হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল, এখনো আমরা খুব কষ্টে আছি। নতুন করে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমাদের আরও বিপদে ফেলবে। এ সিদ্ধান্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপর চরম জুলুম।’
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের পর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে ১১টি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। যা গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে।
এমআই/ওএফ