প্রতারণার মামলায় নর্দান ইউনিভার্সিটির আবু ইউসুফ গ্রেফতার
প্রাসাদ নির্মাণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতার আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানও।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের প্রাসাদ ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটির অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগের একটি দল।
প্রতারণার মাধ্যমে স্বাক্ষর, অফিসের সিল ও জাল করে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া (৩৯) খিলক্ষেত থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলার প্রথম আসামি ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ (৫৮)। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ২০১০ সাল থেকে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করার তাগাদা দিয়ে আসছে। ২০১৩ সালের শুরুতে পূর্বপরিচিত বন্ধু কাজী শামীম মাহদী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জন্য জমি খুঁজছেন বলে জানান। কারণ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি কাওরান বাজারের ভিআইপি সড়কের কাছে হওয়ায় এসএসএফ কর্তৃক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেজন্য আমার কাছে সাহায্য চায়। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজী শামীম মাহদী মামলার প্রথম আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহসহ আরও কয়েকজন আমার কার্যালয়ে আসেন। বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ জমি বিক্রির বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানান যে, তাদের একটা জমি দরকার। দক্ষিণখান এলাকার আশিয়ান সিটির সাইট ভিজিট করে তারা জানায়, পাঁচ বিঘা জমি লাগবে। তারা দক্ষিণখান মৌজার মহানগর জরিপ দাগ নং-২৬৮০৪, ২৬৮১৬, ২৬৪৮৬, ২৬৪৮৫, ২৬৪৮৭, ২৬৮০৮ এবং ২৬৪৮৯ পছন্দ করেন।
আলাপ-আলোচনার পর জায়গার মূল্য ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে খিলক্ষেত থানাধীন আশিয়ান মেডিকেল কলেজে অবস্থিত নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত অফিসে দুই পক্ষের সম্মতিতে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়।
চুক্তিপত্রে প্রথম পক্ষ হিসেবে প্রথম আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জমির ক্রেতা এবং দ্বিতীয় আসামি মো. রিয়াজুল আলম সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল, জমির দামের সম্পূর্ণ টাকা বছরের ৩০ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করতে প্রথম পক্ষ বাধ্য থাকবেন। কিন্তু উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ৫০ কোটি টাকার মধ্যে নগদে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন এবং অবশিষ্ট ২০ কোটি টাকা বাকি রাখেন। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধে সময় চান। প্রথম আসামি জানান, ‘আমরা কাজ শুরু করি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাকি টাকা পরিশোধ করে দেবো’। আমি তাদের কাজ শুরু করার অনুমতি প্রদান করি। কাজ শুরু করার পর থেকে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন এবং টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন বাহানা করতে থাকেন।
এভাবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাকি টাকা পরিশোধ করেননি। পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় আমার জমি বিক্রির পাওনা টাকা চাইলে ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জানান, আমি কোনো টাকা তাদের কাছে পাব না। কারণ আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন এবং তারা জমির দাম বাবদ সম্পূর্ণ টাকা আমাদের পরিশোধ করেছেন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহর কাছে জমি বিক্রির চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। সেই জমিটি রেজিস্ট্রিকৃত সাফ-কাবলা দলিল নং-১১৩৫৩ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ মূলে রেজিস্ট্রি হয়। এতে জমির মূল্য ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ওই দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে পারি, দলিলটি কমিশনিংয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এবং দলিল সম্পাদনকারী মোহরার হিসেবে আমার অফিসের মোহরার শহিদুল ইসলামের নাম রয়েছে।
মোহরার শহিদুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জানান, এমন কোনো দলিলের লেখার কাজ তিনি করেননি। আমি উক্ত দলিল সম্পর্কে ২ ও ৩ নম্বর আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ‘নর্দান কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ করেই আপনার জমি রেজিস্ট্রি করেছে’।
বারবার নর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, এই বিষয়ে আমি যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করি। এছাড়া আমাকে বিভিন্ন সময়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষর, অফিসের সিল ও মোহার মো. শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জমির দলিলের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
জেইউ/এমএইচএস