আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতিতে দুদকের প্রথম মামলা
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দুস্থদের মাঝে গত জানুয়ারি ও জুন মাসে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এ প্রকল্পে বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্মিত ঘরের মান নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে এতদিন দেখা যায়নি।
দীর্ঘদিন পর পটুয়াখালীর দশমিনায় আশ্রয়ণের একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হলো। প্রকল্পের আওতাধীন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণ না করে সোয়া কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
বুধবার দুদকের পটুয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক আরিফ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কলাপাড়া উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘাটলা এবং ১০টি কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণ কাজ না করে ১৩ বিলের মাধ্যমে এক কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স মো. শামিম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের ব্যয় বাবদ ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫০৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে প্রতিটি ঘাটলার ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার ৪১৮ টাকা। অন্যদিকে ১০টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ ৯৮ লাখ এক হাজার ১৩৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এভাবে মোট এক কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স কোনো প্রকার টেন্ডার বা কোটেশন দাখিল কিংবা কাজ না করেই ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল ১০ কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার নির্মাণ ব্যয় দেখিয়ে ১৩টি বিল দাখিল করে। যা মেসার্স সারিকা ট্রেডার্সের বিলগুলো কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষের সইয়ে দাখিল করা হয়।
বিলসমূহে প্রাথমিকভাবে আশ্রয়ণ -১ প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়া পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের অনুকূলে অ্যাডভাইজ ইস্যুর জন্য দাখিল করা হয়, যা তার সোনালী ব্যাংক হিসাবে জমা করে উত্তোলন করা হয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে ওই বছরের ২১ জুলাই উত্তোলিত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানকালে জব্দকৃত বিলসমূহের হিসাব নম্বর সংশোধনীতেও আসামী তপন কুমার ঘোষের সইয়ের সত্যতা পাওয়া গেলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সই জাল প্রমাণিত হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলায় দায়ের হয়।
এর আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ২০২০ সালের ২২ জুলাই পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়াদের অভিযোগ ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে কলাপাড়ায় খাজুরা, চালিতাবুনিয়া, গোড়া আমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মীবাজার, নিশানবাড়িয়া, গামুরিবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজ শিববাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় নয় লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা।
এছাড়া নিশানবাড়িয়া, গামুরি বুনিয়া, নীলগঞ্জ, গোড়াআমখোলা পাড়া, খাজুরা ও ফাসিপাড়া দুটি ঘাটলাসহ মোট ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার কোনো কাজ করা হয়নি। সেখানে সব বিল বাবদ মোট এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৫ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সারিকা এন্টারপ্রাইজ তুলে নিয়েছে। এসব বিলে কলাপাড়ার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষের সই ছিল।
অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদার মো. শামীম গণমাধ্যমে দাবি করেন, তাকে কলাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ফোন করে বিল রেডি করার কথা বলা হয়েছে। তিনি গিয়ে টাকা তুলেছেন। তবে করোনার কারণে কোনো কাজ করতে পারেননি বলেও জানান তিনি।
আরএম/আরএইচ