লাবিবা-লামিসার প্রথম অস্ত্রোপচার সম্পন্ন, টিস্যু তৈরির ব্যবস্থা
জন্মের পর থেকে জোড়া লাগা দুই বোন লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করতে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। আজ (সোমবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২ জন দক্ষ চিকিৎসক এই অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার এ অপারেশন শুরু হয় সকাল ৯টায়, শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
লাবিবা-লামিসাকে সকাল আটটার দিকে নিউরো সার্জারি অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টায় তাদের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়।
দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের কনফারেন্স রুমে অপারেশনের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল।
তিনি বলেন, আজ আমরা প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করেছি। মূল অপারেশনে যেতে আরেকটু সময় দরকার। আজ মূল ধাপের অপারেশন শুরু করলে শিশু দুটিকে বিচ্ছিন্ন করার পর লামিসার কিছু জটিলতার আশংকা ছিল। সেক্ষেত্রে নারী হিসেবে তার পূর্ণতা পেতে সমস্যা হতো।
প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচারের পর যে সিদ্ধান্ত
শিশু লাবিবা-লামিসার শরীরে পর্যাপ্ত টিস্যু না থাকায় চামড়ার নিচে দুটি সিলিকন বল স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে ডা. আশরাফুল উল হক কাজল বলেন, এই জায়গায় প্রতি সপ্তাহে আমরা ৫০-১০০ এমএল স্যালাইন পুশ করব। অর্থাৎ, একটি শরীরে টিউমার যেরকম বাড়তে থাকে সিলিকন বল দুটিও টিউমারের মতো বড় হতে থাকবে। এরপর আমরা ৪-৬ সপ্তাহ সময় নেব। এতে চামড়া ও টিস্যু অনেক বড় হবে। তখন তাদের আলাদা করার পর এখান থেকে টিস্যু ও চামড়া নিয়ে কাভার করা হবে।
তিনি বলেন, আশা করি শিশু দুটির যোনিদ্বার কোনো ইনজুরি ছাড়াই আমরা পৃথক করতে পারব। যোনিদ্বার পৃথক করার ৬-৮ সপ্তাহ পর মূল অপারেশন করা হবে। সেই পর্যন্ত লাবিবা-লামিসা আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, এটি একটি ক্রিটিক্যাল অপারেশন। আমাদের অনেক চিন্তা-ভাবনার বিষয় আছে। আমাদের এমনভাবে অপারেশন করতে হবে যেন তাদের অপারেশন-পরবর্তী কোনো ঝুঁকি না থাকে এবং অপারেশনের পর তারা স্বাভাবিক জীনবযাপন করতে পারে। আমরা সময় নিচ্ছি, যাতে সর্বনিম্ন ঝুঁকিতে সর্বোচ্চ সফলতার সম্ভাবনা থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার আইয়ুব আলী, পেডিয়েট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আইয়ুব আলী সরকার ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিধান সরকারসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।
লাবিবা-লামিসার পরিচয়
লাবিবা ও লামিসার বয়স আড়াই বছর। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম হয়। জন্মগতভাবে তারা জোড়া লাগানো। ঢামেক হাসপাতালে আড়াই মাস হলো তারা ভর্তি হয়েছে।
তাদের দুজনের মলদ্বার একটি। এর আগে বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে পৃথক মলদ্বার তৈরি করা হয়েছে।
এই দুই শিশুর জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডে পেডিয়াট্রিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক্স, রেডিওলজি, ইউরোলজি, অর্থোপেডিক, সার্জারি ও অ্যানেসথিওলোজির চিকিৎসক আছেন।
লাবিবা-লামিসার বাড়ি নীলফামারী জেলায়। তাদের বাবা দিনমজুর। ঢামেক হাসপাতাল বিনামূল্যে এই দুই শিশুর চিকিৎসা করছে।
এসএএ/এইচকে/জেএস