মুরাদের কানাডায় প্রবেশচেষ্টা : যা বললেন হাইকমিশনার
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের কানাডায় প্রবেশচেষ্টা নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন বলেছেন, তাকে (মুরাদ) কানাডায় প্রবেশাধিকার দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত একমাত্র ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সির।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন এ কথা বলেন।
হাইকমিশনার জানান, এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে করোনাকালীন ভ্রমণের বিষয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আছে, যা দেশটিতে ভ্যালিড (বৈধ) ভিসা থাকা সব ভ্রমণকারীর জন্য প্রযোজ্য। তবে কোনো ব্যক্তির ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেবল ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সি।
জানা যায়, এখনও কানাডায় প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন মুরাদ হাসান। করোনা ইস্যুতে কানাডা ভ্রমণের যথাযথ অনুমোদনের কাগজপত্র না থাকায় দেশটিতে এখনো প্রবেশাধিকার পাননি তিনি।
সকালে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডা. মুরাদের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কানাডার ইমিগ্রেশনও আমাদের কিছু জানায়নি। তবে গণমাধ্যমে খবর এসেছে তাকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
কানাডার স্থানীয় বাংলা পত্রিকা ‘নতুন দেশ’-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কানাডায় বসবাসরত মুরাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে কানাডার সরকারি সূত্র থেকে এই বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কানাডা বর্ডার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডা. মুরাদ আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাকে জানান, বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান তার প্রবেশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। পরে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ঢাকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৮৫৮৫ ফ্লাইটে করে দুবাই যান। সেখান থেকে তিনি কানাডার উদ্দেশে রওনা হন।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মুরাদ হাসানের বিদেশ যাত্রায় কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মন্ত্রী তখন বলেন, ‘তিনি বিদেশে থাকবেন নাকি স্বদেশে থাকবেন, এটি তার এখতিয়ারের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নাই।’
বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডা. মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ হারান।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এ রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
এনআই/এইচকে