করোনাকালে মশার রাজত্ব, শঙ্কিত নগরবাসী
করোনাভাইরাস নামে অদৃশ্য এক শত্রুর কবলে পুরো পৃথিবী। ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে লাখে লাখে মানুষ। টিকা এলেও ২২১ দেশে সহসাই ছোট হচ্ছে না আক্রান্ত-মৃত্যুর মিছিল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার ‘সম্ভাব্য টিকা’ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার বেড়েছে মশার উপদ্রব। কথায় বলে না- ‘এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা’।
বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির দুর্ভোগ, আর বছর জুড়ে যানজট রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এ ভোগান্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে শীত মৌসুমে হঠাৎ করেই রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। ঘরে-বাইরে, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেরেশন নানান উদ্যোগ নিলেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না জনগণ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মশক নিধন কর্মীরা নিয়মিত ওষুধ ছিটিয়ে গেলেও তা কোনো উপকারেই আসছে না।
মশার উৎপাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও পড়েছে বিপাকে। বার বার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তবে নতুন বছরে দুই সিটি এখনও তেমন কোনো ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪০৫ জন। কিন্তু ডেঙ্গুর মৌসুম শেষে আবারও বেড়েছে মশার উপদ্রব। এবার আর এডিস মশা নয়, কিউলিক্স মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা নূরুন নাহীদ মোহম্মাদ হাবীব। একটি বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহীদ ২ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানের জনক। তিনি বলেন, মশার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। ঘরে, বাহিরে, অফিসে সব জায়গায় মশার উপদ্রব। হঠাৎ করেই এ মশার উপদ্রব তীব্র হয়েছে। ছোট বাচ্চাটিকে নিয়ে সমস্যা আরও জোরালো হয়েছে, কারণ সারাদিন তো আর তাকে মশারির ভিতরে রাখা যায় না। স্বাস্থ্যগত কারণে বাসায় কয়েল বা অ্যারসোলও ব্যবহার করতে পারি না। সিটি করপোরেশন জোরালো পদক্ষেপ না নিলে মশার উপদ্রব আরও বাড়বে।
মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশের চায়ের দোকানদার শাজাহান আলী। তিনি বলেন, রাতের কথা পরে বলি, দিনের বেলাতেই মশার কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে ভালোভাবে কাস্টমার বসেও থাকতে পারেনা। কয়েল জ্বলে, তবুও মশার কমতি নেই। সিটি করপোরেশনের মশা ওষুধ ছিটানো লোকদেরও তেমন দেখা মেলে না।
মশার উপদ্রব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, শীতের সময় কিউলেক্স মশার উপস্থিতি বেড়ে যায়। অনেক জলাশয় শীতকালে শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে এখন কিউলেক্স মশা জমছে। আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছে। কিউলেক্স মশার বংশবিস্তার রোধে লার্ভিসাইডিং করা হচ্ছে, ফগিংও চলছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এক জায়গায় যদি ওষুধ দেওয়া হয়, নির্দিষ্ট সময় পর সে জায়গায় আবার ওষুধ দিতে হবে।
এদিকে গত ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং প্রাকৃতিক খালগুলোর ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে আয়োজিত সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে মশা অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা হয় ঘর-বাড়িতে। বাড়ির মালিকসহ সবাই এ মশা মারতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিউলেক্স মশা হয় ঝোপ-জঙ্গল, আবর্জনা এবং ময়লা পানিতে। সেজন্য আমরা কচুরিপানাসহ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে মেশিন কিনবো।
এএসএস/এমএইচএস