আমরা আইন ভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়েছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা তো আইন ভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়েছি। হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ হয়েছিল, মালিকরা তাদের গাড়িতে সেটি আবার লাগাচ্ছে। এটা কীভাবে হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। আইন ভঙ্গ করে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি। এভাবে প্রতিনিয়ত আইন ভাঙছি। তাই এই নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আমরাও একমত, বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য শাখা যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা চাই একটি সড়ক দুর্ঘটনায়ও যেন মানুষ না মারা যায়। সরকারও সেভাবে কাজ করছে। কিন্তু ক্যানসারসহ নানা রোগে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায় তার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৫-২০ বছর আগে যদি ফিরে দেখেন ঢাকা-আরিচা সড়ক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর সেখানে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনা তেমন দেখি না। মূলত রাস্তা উন্নতকরণের ফলে দুর্ঘটনা কমে এসেছে। তবে শুধুই যে সড়ক বা চালকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে, তাও কিন্তু নয়।
তিনি বলেন, বিদেশে ২০ শতাংশ সড়ক আছে। কিন্তু আমরা দেশে সেটিকে ৮ থেকে ১০ শতাংশে এনেছি। প্রধানমন্ত্রী যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন করতে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ফ্লাইওভার, ব্রিজ প্রভৃতি নির্মাণ করে চলেছেন। জার্মানে দেখেছি, ২৫০ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলেছে। কিন্তু সেটা আমরা চিন্তা করতে পারছি না আমাদের জনবহুল ১৮ কোটি মানুষের জন্য।
দুর্ঘটনারোধে নিসচার ১১১টি সুপারিশের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা ১১১টি সুপারিশ করেছিলেন। সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী এটি আমার হাতে দিয়েছেন। এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন ১-২ বছরে করা সম্ভব নয়। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করে করতে হবে। বাস-ট্রাক বে এর কথা বলা হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া সড়কে এমনটি করা হয়েছে। আমাদের জায়গা কম, ইচ্ছা অনেক বেশি। ধীরে ধীরে চালকদের বিশ্রামাগার রাখার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। আবার ড্রাইভারকেও সচেতন হতে হবে। ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন পুরো ঢাকা ক্যামেরার অধীনে চলে আসবে। তবে এটাও সময় সাপেক্ষ। এরপর চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরেও তাই করা হবে। তাই সবশেষে বলতে চাই, আমিও আপনাদের সবার মতো নিরাপদ সড়ক চাই, যেন আর সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটে, কেউ আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর আগে যখন এই আন্দোলন শুরু করি তখন অনেকেই আমাকে পাগল বলত। সড়ক দুর্ঘটনায় বউ হারিয়ে লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করত। তারপর থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আমার স্ত্রী দুর্ঘটনায় ডিসেম্বরে মারা যাননি, তবু ডিসেম্বরকে আমাদের বিজয়ের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছি, যে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে আরেকটি বিজয় চাই। মুখের কথা দিয়ে নয়, বাংলাদেশকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। তবে যারা শুধু মুখ দিয়েই বলে দেশকে ভালোবাসেন তারা দেশের জন্য কিছু করুন নাহলে দেশকে যে ভালোবাসার কথা বলেন তা বিশ্বাস করি না। দেশে ১২০টি শাখাসহ বিদেশেও দেশের মানুষের সড়ক দুর্ঘটনার রোধে অনেকেই আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা এ জন্য গর্বিত। আমরা মনে করি, চালকরাও আমাদেরই, তাদের জন্য কাজ করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, আমরা করোনাকালে ঈদের সময় সাধ্যমতো চালকদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। প্রতিটা সংগঠন কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে। কিন্তু আমরা তা মানি না, সেই টাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। তার প্রয়াস হিসেবে স্বাধীনতার ৫০ বছরের সঙ্গে ৫০টি পরিবারে সেলাই মেশিন বিতরণ করছি। এর সঙ্গে আমাদের শাখাগুলো আরও ৫০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে। দেশটা আমাদের। চালক, ক্ষতিগ্রস্ত সবাই আমাদের। আমরা তাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই। তবে টাস্কফোর্সের যে ১১১টি প্রস্তাবনা রয়েছে আমার আপনার কাছে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সেসবের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, বিআরটিএয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ম. আ. হামিদ প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি