ব্যাখ্যা চেয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন এই নিষেধাজ্ঞা দুঃখজনক।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘চির অম্লান বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মোমেন বলেন, র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দুঃখজনক। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি নিজেও সারপ্রাইজড।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শান্তিতে ছিলাম। মালয়েশিয়া থেকে শ্রমবাজার নিয়ে সুখবর পেলাম। কিন্তু রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রদূত আমাকে ফোন করে জানালেন, বাইডেন প্রশাসন র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা আমাদের দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে লিস্টেড করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এগুলো লোক দেখানো, মোর ফ্যাক্ট বেইজড না।’
মোমেন বলেন, ‘আমেরিকা একটা পরিপক্ব দেশ। ওখানে অনেক পণ্ডিত লোক থাকে। তারা অনেক প্রগেসিভ আইডিয়া দেয়। কিন্তু সেটা মোর সলিড ফ্যাক্ট-বেইজড হতে হবে। তারা নিজেদের দেশে এবং বাইরে অনেকগুলো অ্যাকশন নিয়েছে, যেগুলোতে পরে দেখা যায় তারা লাভবান হয়নি।’
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দফতর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রয়েছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি।
এছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেটার কারণে এ দেশে সন্ত্রাস নাই, বাংলা ভাইসহ বাংলাদেশি লোকেরা সন্ত্রাসমুক্ত থাকে; যার কারণে অনেক অপকর্ম দূর হয়, সেটাকে তারা এনজিও ও হিউম্যান মেম্বার্স গ্রুপের অভিযোগের কারণে লিস্টেড করেছে। বাংলাদেশের জনগণের এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি যথেষ্ঠ আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। এখানে যদি কেউ বাজে কাজ করে তারও শাস্তি হয়েছে। এমন একটি ডিসিপ্লিনড প্রতিষ্ঠানকে তারা লিস্টেড করেছে। ওখানে যারা কাজ করেন, হেড অব ইনস্টিটিউশন, তাদেরও অবাঞ্ছিত করেছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক।’
র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা পাওয়ার পর সকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়েছি। আমাদের পররাষ্ট্রসচিব ওনার সঙ্গে বৈঠক করেছে। উনি (রাষ্ট্রদূত) অনেকটা বিস্মিত। দেখি কী হয়।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে মোমেন বলেন, ‘আমেরিকাতে প্রতি বছর ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়। এরা কীভাবে নিখোঁজ হয় সরকার জানে না। প্রতি বছর ইন দ্যা লাইন অব ডিউটি পুলিশ হাজারখানেক মেরে ফেলে। হাজার হাজার লোকের মরদেহ পাওয়া যায়। তার জন্য কোনো কর্মকর্তার শাস্তি হয় না। বাংলাদেশে ১০ বছরে র্যাব ৬০০ জন মেরেছে। কিন্তু এর তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা আশা করব, এটা মোর ফ্যাক্ট-বেইজড হবে। বলার মতো করে একটা বলে দিলাম, এমন হয় না। বলার জন্য বলা না। এখন নতুন এক ঢং, হেড অব ইনস্টিটিউশন করেছে। এগুলো লোক দেখানো। সব দেশেই লোক নিখোঁজ হয়।’
র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘মনে হয় না। তবে সেটা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।’
ভূ-রাজনীতির কারণে এটা হলো কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হতে পারে। কী হচ্ছে এটা আমরা বিবেচনা করব। দেখা যাক কী হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ডাক না পাওয়া প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘গণতন্ত্র বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। সব দেশেই সব দিক বিবেচনায় গণতন্ত্র পুরোপুরি ফিট, সেটা বলা যায় না। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) নিজের দেশেই গণতন্ত্র ঠিক রাখতে পারে না।’
এনআই/এসএসএইচ/এসএম/জেএস