বোধনের পথে পথে বিজয়-গাথা
মহান মুক্তিযুদ্ধ মূলতই জনযুদ্ধ। বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এই যুদ্ধ করেছিল বলেই মাত্র নয় মাসে বিজয় অর্জিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন।
সেই চেতনাকে ধারণ করে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে একটি ট্রাককে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে রূপান্তর করে ‘পথে পথে বিজয়-গাথা’ শিরোনামে মাসব্যাপী পথ আয়োজনের সূচনা করেছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম।
আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে নিউমার্কেট মোড়ে এ আয়োজনের সূচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র।
এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা জ্বলজ্বলে রাখতে এবং স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের শিখা সমুন্নত রাখতে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এ সময় স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের অকাতরে আত্মদানের গৌরবগাথা এ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজনের শুরুতে কথা ও কবিতায় অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান। নাট্যজন সুচরিত চৌধুরীর শোনান কবি সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারাজীবন’।
আবৃত্তিশিল্পী সঞ্জয় পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চৌধুরী। এরপর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
এরপর নগরীর সিআরবি সাতরাস্তার মোড়ে একই মঞ্চে কথামালায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর হোসাইন কবির, দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রণব বল, বিডিনিউজ-এর ব্যুরো প্রধান মিন্টু চৌধুরী।
এ সময় বক্তারা বলেন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেই বিভীষিকাময় সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জ্বীবিত ও সাহস যোগানোর স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, এখনো ধর্মান্ধগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বাঙালির জাতীয়তাবোধে বারবার আঘাত হানছে। তাদের প্রতিহত করতে আজকের তরুণ প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।
এ পর্যায়ে আবৃত্তি করেন ইসমাঈল সোহেল, জসীম উদ্দীন, সেউঁতি মজুমদার, সুনিপুন সেনগুপ্ত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র সহ -সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী বিপ্লব কুমার শীল, মৃন্ময় বিশ্বাস, অনুপম শীল প্রমুখ।
পরে নগরীর সিটি গেট ও কর্নেল হাট নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক টুন্টু দাশ বিজয় একাত্তরের অপশক্তির ন্যক্কারজনক উত্থান রুখে দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরেন। এ পর্বে মুক্তির গান পরিবেশন করেন ঈশা দে দীপান্বিতা দেবী, পড়শী ধর, উৎপল চন্দ্র নাথ।
এরপর বোধনের আবৃত্তিশিল্পীরা পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে বাংলার বীরসন্তানদের স্মরণে প্রদীপপ্রজ্জ্বলন করেন। নগরীর চেরাগীপাহাড় মোড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিবশতবর্ষ উদযাপনে পথে পথে বিজয়-গাথার রূপরেখা তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক এম নওশের আলী খান, কামরুল হাসান বাদল, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। সারাদিন বোধন আবৃত্তি পরিষদের আবৃত্তিশিল্পীরা ট্রাকে করে গান-কবিতা-কথামালায় অংশ নেন। এছাড়া অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
কেএম/এইচকে